Lead Newsঅপরাধ ও দূর্ঘটনা

নার্স ফেইসবুকে ব্যস্ত, হাসপাতালে দুই শিশুর মৃত্যু

নার্সের অবহেলায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযােগ উঠেছে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। এ সময় ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকদের রােষানলে পড়েন দায়িত্বরত নার্সসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগীরা অভিযুক্ত নার্সদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানান। মৃত দুই শিশু হলাে, কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছয়ানিপাড়ার দিলীপ চন্দ্র রায়ের কন্যা এবং আরেকজন রাজীবপুর উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের রবিউল ইসলামের কন্যা শিশু।

দুই শিশু শনিবার ১৮ সেপ্টেম্বর জেনারেল হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে। সােমবার ২০ সেপ্টেম্বর দুপুর কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

অভিভাবক দিলীপ চন্দ্র রায় বলেন, “গত শনিবার জেনারেল হাসপাতাল তার স্ত্রী অঞ্জনা একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। স্বাভাবিক প্রসব হলেও জন্মের সময় মাথায় আঘাত পেয়েছে জানিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরপর তাকে ইনজেকশন ও স্যালাইন দেবারও প্রেসক্রিপশন করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। ওষুধ আর স্যালাইন নিয়ে এসে তা নার্সদের দিয়ে বাচ্চাকে দেবার জন্য অনুরােধ করলেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। তারা রুমে বসে মােবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছিল।
এখনও স্যালাইন অমনি পড়ে আছে। সােমবার দুপুর বাচ্চার নাক থেকে অক্সিজেনের লাইন খুলে গেলে তা ঠিক করার জন্য নার্সদের ডাকি। তারা উল্টো আমাকে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরেই বাচ্চাটা মারা যায়। বাচ্চার মৃত্যুর জন্য নার্সদের অবহেলাকে দায়ী করেন ভুক্তভােগী এই বাবা।”

অপর মৃত শিশুর বাবা র‌বিউল ইসলাম জানান, “বাচ্চাকে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ দিতে ডাকলে নার্সরা আসেন না। চিকিৎসার অভাবে কখন বাচ্চা মারা গেছে আমরা টেরও পাইনি। নার্সরা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। রোগীর সেবা করতে তাদের অনীহা।”

র‌বিউ‌লের পিতা ও মৃত শিশুর দাদা ফুল মিয়া বলেন, “বাচ্চা মারা‌ যাওয়ার পর নার্সরা আমাদেরকে ব‌লে বাচ্চা রংপুর নি‌য়া যাইতে হ‌বে। মরা বাচ্চা নিয়া আমা‌দের রংপুর যেতে বলে। এরা ইচ্ছা করে আমার নাতনিকে মেরে ফেলেছে।”

ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ, “নার্সরা ডিউটি রু‌মে মোবাই‌ল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কোনও সমস্যার কথা বল‌লে অভিভাবকদের সা‌থে খারাপ আচরণ ক‌রে চিকিৎসা না দেয়ার হুমকি দেন।”

শিশু ওয়ার্ডে বিকাল শিফটে দায়িত্বরত নার্স তুল‌শি রানী ও উ‌র্মিলা শাহা অভিযোগের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তারা বলেন, ‘ঘটনার সময় যারা ডিউটিতে ছিলেন, তারা ডিউটি শেষে চলে গেছেন।’

নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ কাকলী বেগম বলেন, “যে শিশু দুটি মারা গেছে তাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। এরপরও নার্সদের কোনো অবহেলা থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ রোগীর বিপরীতে ভর্তি আছে ১১৮ শিশু। নার্স সংকট থাকায় অতিরিক্ত সংখ্যক রোগীর সেবা দি‌তে হিমশিম খে‌তে হয়। ফ‌লে ডিউটিতে কিছুটা ভুল ত্রুটি হ‌য়ে থাকতে পা‌রে।”

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ লিংকন বলেন, “আমি বিষয়টি জানার পর শিশু ওয়ার্ডে গিয়েছি। শিশু দুটির শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বাচ্চা দুটিকে রংপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।”

নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযােগের বিষয় তিনি বলেন, “রােগীর স্বজনরা বিষয়টি আমাকেও বলেছে। প্রয়ােজনে আমি তদন্ত কমিটি করে দেবাে। সেবা দিতে গিয়ে যদি তারা রােগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে সেটা কাম্য নয়। সেবা, ভাষাগত কিংবা ব্যবহারগত বিষয়ে তারা যদি কােনো দায়িত্ব অবহেলা করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 4 =

Back to top button