Breakingভ্রমন

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে টেকনাফ সৈকতে মানুষের ঢল

ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার দুপুর থেকে টেকনাফ সৈকতে দলে দলে নামতে শুরু করেন শত শত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ স্থানীয় লোকজন। তাঁরা সৈকতের লোনা জলে নেমে শরীর ভেজাচ্ছেন। তুলছেন ছবি, করছেন ভিডিও। বিকেল ৪টা পর্যন্ত অন্তত তিন কিলোমিটার সৈকতে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ। অথচ সেখানে দেখা যায়নি পুলিশসহ জেলা প্রশাসনের কাউকে।

করোনার সংক্রমণ রোধে ১ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ১২০ কিলোমিটারে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনের সমাগম নিষিদ্ধ করে জেলা প্রশাসন। এরপর থেকে কক্সবাজার শহরের সমুদ্রসৈকত, হিমছড়ি, ইনানী সৈকতে লোকজনের সমাগম বন্ধ রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঈদুল ফিতরের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন শত শত মানুষ কক্সবাজার সৈকতে গিয়ে ফিরে আসেন পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের স্বেচ্ছাসেবীদের বাধার মুখে।

দেখা গেছে, দুপুর ১২টা থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণ তরুণীরা দল বেঁধে টেকনাফ সৈকতে নামছেন। তাঁরা উপজেলা বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসছেন খোলা জিপ গাড়ি ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক-টমটম নিয়ে। গাড়িগুলো মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে রেখে নারী-পুরুষ, শিশুরা নামছে সৈকতে। কেউ তাদের বাধা দিচ্ছে না।

সৈকতের বালুচরে বসে ছবি তুলছেন সাবরাং এলাকা থেকে আসা দুই তরুণ সোহেল ও বদিউল আলম। তাঁদের মুখে মাস্ক নেই। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সৈকতে নামার কারণ জানতে চাইলে বদিউল আলম বলেন, প্রচণ্ড গরমে ঘরে থাকা যাচ্ছে না, তাই শরীরটা ঠান্ডা করতে সৈকতে ছুটে এসেছি। কিন্তু এখানে এত বেশি লোকের সমাগম ঘটবে, ধারণা ছিল না।

উপজেলা ২৫ কিলোমিটার দূরে হ্নীলা থেকে সৈকতে এসেছেন গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস। সঙ্গে তাঁর তিন ছেলেমেয়েসহ আরও চারজন। তাঁরা একটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসেছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরার কারণ জানতে চাইলে গৃহবধূ বলেন, সব সময় মাস্ক পরেন তাঁরা, কিন্তু সৈকতের নামার সময় মাস্ক সঙ্গে আনতে ভুলে গেছেন।

মেরিন ড্রাইভে ভ্রাম্যমাণ চটপটি বিক্রেতা আবদুর রশিদ বলেন, সকাল থেকে সৈকতে লোকজনের আসা শুরু হয়েছে। ২০-৬০ মিনিট থাকার পর কেউ উঠে যাচ্ছেন, কেউ আবার নামছেন। বেলা তিনটার পর থেকে লোকজনের সমাগম বেড়ে যায়। পুলিশ ও প্রশাসনের কারও উপস্থিতি না থাকার সুযোগে একজন আরেকজনকে মুঠোফোনে খবর দিয়ে ডেকে আনছেন।

দেখা গেছে, সৈকতে নামা অধিকাংশ লোকজনের মুখে মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। যার যেমন ইচ্ছা গাড়ি নিয়ে এসে সৈকতে নামছেন, তারপর ঘুরেফিরে বাড়ি ফিরছেন।

সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিললুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার সৈকতের লাবণী, সিগাল, শৈবাল, কলাতলী, সুগন্ধাসহ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি, ইনানী সৈকত পর্যন্ত ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম পাহারায় রাখা হয়েছে। কিন্তু টেকনাফ সৈকতে কেউ নেই। এখন পুলিশ পাঠিয়ে সৈকতে নেমে পড়া লোকজনকে সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

একই কথা বলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিন আল পারভেজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে ১ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকসহ যেকোনো মানুষের সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ যেন সৈকতে নামতে না পারেন, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর রাখা হয়েছে। টেকনাফ সৈকতে লোকজনের সমাগম ঘটে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হোটেলের মালিকেরা বলছেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনার পর ১ এপ্রিল থেকে সৈকতে লোকসমাগম বন্ধ আছে। এর ফলে পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজ বন্ধ আছে। বেতন–ভাতা না পেয়ে অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন হোটেল–মোটেলের অন্তত ৩০ হাজার কর্মচারী। এরপরও করোনার সংক্রমণ রোধে প্রশাসনকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে হোটেলমালিক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টেকনাফ অথবা অন্য কোনো সৈকতে স্থানীয় লোকজনের সমাগম ঘটতে থাকলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্থানীয় লোকজন যদি সৈকতে নামতে পারেন, তাহলে পর্যটকেরা কেন নয়?

সূত্রঃ প্রথমআলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 7 =

Back to top button