ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠা প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের স্বপ্ন ছোঁয়া হলো না। নেইমার-ডি মারিয়াদের কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতলো বায়ার্ন মিউনিখ। লিসবনে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মত চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তুলল জার্মান জায়ান্টরা।
শুরু থেকেই পিএসজি-বায়ার্নের পাল্টাপাল্টি আক্রমণ। ১৯ মিনিটেই গোলটা হয়ে যেতে পারতো পিএসজির। কপালটা খারাপ বলতে হয় ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারের। এমবাপ্পের কাছ থেকে ডি বক্সে বল পেয়ে জালে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন নেইমার কিন্তু নেইমারের সেই শট বায়ার্ন গোলরক্ষক ন্যুয়ার কোনমতে ফেরান। পরমুহূর্তেই টাচলাইন থেকে ফের বলটা আলতো ছুঁয়ে তুলেছিলেন নেইমার, এবারও রক্ষাকর্তা জার্মান গোলকিপার ম্যানুয়েল ন্যুয়ার।
২২ মিনিটে দুর্ভাগ্য বায়ার্নের। রবার্ট লেভানডোস্কির ডি বক্সের মধ্য থেকে নেয়া মাটি কামড়ানো শট লেগে যায় পোস্টে। পরের মিনিটেই সংঘবদ্ধ আক্রমণে ফের সুযোগ ছিল পিএসজির। কিন্তু অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার চেষ্টা একটুর জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।
৩২ মিনিটে বায়ার্নের সহজতম সুযোগটি নস্যাৎ করেন কেইলর নাভাস। জিনাব্রির ক্রস থেকে ডি বক্সে উড়ে আসা বল গোলরক্ষকের একদম সামনে থেকে হেড করেছিলেন লেভানডোস্কি, নাভাস ঠিকই বলটা ধরে ফেলেন।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে পিএসজির সহজ সুযোগ নষ্ট করেন এমবাপে। আন্দার এরেরার পাস থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে বল পেয়েও গোলরক্ষক বরাবর মেরে দেন ফরাসি স্ট্রাইকার। ০-০ সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে চড়াও হয়ে খেলতে থাকে বায়ার্ন। ৫৯ মিনিটে পেয়ে যায় কাঙ্খিত গোলের দেখাও। ২০ গজ দূর থেকে জশোয়া কিমিচের ক্রস থেকে দারুণ নিচু হেডে ডান দিকের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান ফরাসি মিডফিল্ডার কিংসলে কোম্যান।
১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর মরিয়া হয়ে চেষ্টা করতে থাকে পিএসজি। বেশ কয়েকটি সম্ভাবনাও তৈরি করে। ৬৬ মিনিটে ফের সুযোগ নষ্ট করেন এমবাপে। ডি মারিয়ার বাড়ানো বলটায় পা লাগাতে পারলেই গোলটা হয়ে যেতে পারতো। তিন মিনিট পর মার্কিনহোসের মাটি কামড়ানো শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন ন্যুয়ার।
৮৩ মিনিটে পিএসজি রক্ষণ ভেঙে বক্সের ভেতর ঢুকে পড়ছিলেন লেভানদোস্কি। একা গোলরক্ষককে বিপদ থেকে বাঁচাতে পোলিশ স্ট্রাইকারকে পা ধরে দেন ডিয়েগো সিলভা, দেখেন হলুদ কার্ড। বক্সের খুব কাছে থেকে স্পট কিক নিয়ে পোস্টের বাইরে বল পাঠান কৌতিনহো।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে লেভানদোস্কি পিএসজির বক্সে পড়ে গেলেও পেনাল্টি দেননি রেফারি। পাল্টা আক্রমণে বরং গোল শোধের দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল পিএসজি। বক্সের মধ্যে দারুণভাবে বলটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন নেইমার, রক্ষণের চাপের মধ্যেও কোনোমতে বাঁকানো শট নেন। সেটি একটুর জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। শেষ বাঁশির আগে সেটাই ছিল পিএসজির শেষ সুযোগ।
বায়ার্নের এটি ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। এবার পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছে বায়ার্ন মিউনিখ। এর আগে তারা শেষবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১৩ সালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে। সেই সঙ্গে বাভারিয়ান চ্যাম্পিয়ন লিগ জয়ের দিক দিয়ে ছুঁয়ে ফেলেছে গত আসরের শিরোপাজয়ী লিভারপুলকে। ছয়টি করে শিরোপার মালিক লিভারপুল-বায়ার্নের ওপরে এখন আছে কেবল এসি মিলান (৭) এবং রিয়াল মাদ্রিদ (১৩)।