Lead Newsআইন ও বিচাররাজনীতি

নেতাদের নামে হত্যা মামলা: আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি হেফাজতের

নেতাদের নামে হত্যা মামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির নেতারা মনে করছেন মামলার কোনো ভিত্তি না থাকায় এটি টিকবে না। তবে যদি পুলিশি তদন্তে মামলা টিকে যায় তাহলে আইনগতভাবে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদি বলেন, আল্লামা আহমদ শফী আমাদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ছিলেন। তাকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে নেতাদের নামে। এ মামলার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ তার মৃত্যুর পর বড় ছেলে ইউসুফ নিজেই বলেছেন তার বাবার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে। গুজবে কান দেবেন না।

তিনি বলেন, মামলা নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বরের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি মামলা টিকবে না। আর যদি টিকে যায় তাহলে আমরা এটি আইনগতভাবে মোকাবেলা করব। আল্লামা জিহাদি বলেন, মামলা সরকার করেনি, ব্যক্তি করেছেন। এ জন্য এ নিয়ে কোনো আন্দোলনের সুযোগ নেই।
 
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী মারা যান। এর আগে আল্লামা শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদরাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে মাদরাসায় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এ কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর শূরা কমিটির বৈঠকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন আল্লামা শফী। ওই বৈঠকে আনাস মাদানীসহ দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আহমদ শফীকে মাদরাসা থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে পরদিন হেলিকপ্টারে ঢাকায় নেয়া হলে সন্ধ্যায় তিনি আজগর আলী হাসপাতালে মারা যান।

আল্লামা শফীর মৃত্যুর প্রায় তিন মাস পর গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এ হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মীর ইদরিস, জাকারিয়া নোমান ফয়েজীসহ ৩৬ জনের নামে মামলা করেন আল্লামা আহমদ শফীর শ্যালক মো: মঈনুদ্দিন। মামলায় হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ও হত্যাকা দাবি করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। পিবিআইকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ারও নির্দেশ দেন আদালত।
 
মামলার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মামুনুল হক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর আগে আমি তার কাছাকাছি বা পাশাপাশিও ছিলাম না। আল্লামা শফীর মৃত্যুর ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে করা মামলার ন্যূনতম সত্যতা নেই। জাতিকে বিভ্রান্ত করতেই ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলা করা হয়েছে। আশা করি পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মামলাটি বাতিল হয়ে যাবে। এ দিকে হত্যা মামলা হওয়ার পরও গত ২৩ ডিসেম্বরের বৈঠক থেকে মামুনুল হক নতুন করে ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পেয়েছেন।

গত ২৩ ডিসেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী আমাদের মাথার তাজ, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। একটি পক্ষ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য এ মামলা করেছে। এটি নির্জলা মিথ্যাচার, হেফাজত নেতাদেরকে হয়রানি, মাদরাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট এবং রাজনৈতিক চক্রান্তের মামলা। এ মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
 
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজত নেতাদের নামে মামলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নেতারা মনে করছেন মামলা গ্রহণ করার মতো কোনো উপাদান নেই। আর যদি টিকে যায় তাহলে আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। হেফাজতের প্রচার সম্পাদক ও আরেক অভিযুক্ত মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী বলেন, আমরা এ মামলাকে পাত্তা দিচ্ছি না। কারণ মামলায় যে সময়ের কথা বলা হয়েছে ওই সময় বেশির ভাগ লোকই হাটহাজারী মাদরাসায় ছিলেন না। মাওলানা মামুনুল হকসহ অনেকে ঢাকায় ছিলেন। তারপরও মামলা হলে আমরা ইতোমধ্যে আইনজীবী প্যানেলের সাথে বসে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রয়োজনে আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। এর পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও মোকাবেলা করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × three =

Back to top button