Lead Newsজাতীয়শিক্ষাঙ্গন

পাঠ্যবইয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট! ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান থাকছেন যথাযথ মর্যাদায়।

থাকছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চও।

যৌক্তিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হবে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে। পাঠ্যবইয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে থাকছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান ও থাকছেন যথাযথ মর্যাদায়। বাদ যাচ্ছে না ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু খেতাব পাওয়ার বিষয়টিও।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা যায়, পাঠ্যবইয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে অতিরঞ্জিত করে কাউকে উপস্থাপন না করে যার যতটুকু অবদান তাকে ততটুকুই রাখা হচ্ছে। কাউকে খাটো করা হচ্ছে না।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র অনুযায়ী, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এ রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আছেন ৭ মার্চের জায়গায়, উনি বঙ্গবন্ধু হিসেবে আছেন। ১৯৬৯ সালে তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাব দেওয়া হয়েছে সেটাও আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যার যতটুকু অবদান ততটুকুই আছে।’

তবে ‘জাতির পিতা’ বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে রাখতে সবাই একমত হননি।

তিনি বলেন, ‘এক নেতার এক দেশ— এই ধারণা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা আরও অনেক নেতা রয়েছেন, তাদের রাখা হচ্ছে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দিন আহমেদসহ যার যতটুকু আবদান তা রাখা হচ্ছে। অতিরঞ্জিত ইতিহাস বাদ যাচ্ছে।’

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার পেক্ষাপটে যাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন— বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী চরিত্র মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী ও জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ।

মুক্তিযুদ্ধের পেক্ষাপটে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার (পরবর্তী কালে রাষ্ট্রপতি) মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পাঠ্যবইয়ে।

জিয়াউর রহমানের ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাকে বেশি করে দেখানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘কারও ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত কিছু থাকছে না। পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের যতটুকু রাখা যায়, ততটুকুই থাকছে।’

এছাড়া সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদকে।

এদিকে নতুন পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের দেয়াল লিখন ও দেয়ালচিত্র। থাকছে ধর্মীয়সহ নীতিবাক্য। পাঠ্যইয়ের ভেতরে আবু সাঈদের ছবিসহ তার ওপর লেখা যুক্ত করা হচ্ছে।

ইসলাম ধর্মীয় পাঠ্যবইয়ে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ক্যালিওগ্রাফি। অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে ক্যালিওগ্রাফির ধরনে আল কোরআন ও আল হাদিস থাকছে। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মীয় পাঠ্যবইয়ে গৌতম বুদ্ধের বাণী, একইভাবে খ্রিষ্টান ধর্মের বইতে খ্রিষ্টের বাণী ও হিন্দু ধর্মীয় বইয়ে তাদের বাণী থাকছে।

তবে এবারের পাঠ্যবই থেকে বাদ যাচ্ছে বেশ কয়েকটি গল্প। নতুন করে কিছু গল্প-কবিতা যুক্ত করা হয়েছে। ‘ফাদার অব দ্য নেশন’ বাদ দিয়ে যুক্ত করা হচ্ছে ‘সেন্স অব সেলফ’, ‘লোনলিনেস’। ‘গ্রাফিতি’ নামে নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া পঞ্চম থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে কিছু পাঠ্য বাদ যাচ্ছে এবং নতুন করে যুক্তও হচ্ছে কিছু বিষয়।

পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে এবং প্রথম দিকে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রম চলছে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন শিক্ষাক্রমটি স্থগিত করে পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরেছে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের সর্বশেষ সংস্করণ পরিমার্জন করে শিক্ষার্থীদের হাতে ২০২৫ সালের পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে।

এ ক্ষেত্রে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত পাঠ্যবইয়ে কিছু পরিমার্জন এনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। অপরদিকে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবই নতুন ও পুরনো শিক্ষাক্রমের আলোকে সর্বশেষ সংস্করণ পরিমার্জন করে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০১৩ সালে পাঠ্যবই প্রণয়ন করে শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছিল। ওই শিক্ষাক্রমের সর্বশেষ সংস্করণ ২০২২ ও ২০২৩ সালের বইয়ে পরিমার্জন করা হচ্ছে।

বর্তমানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। আর আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল, তা স্থগিত করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

নবম ও দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন বাদ দেওয়া হয়েছিল। পুরনো কারিকুলামে ফেরায় বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগ) থাকছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × five =

Back to top button