ফেসবুকে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি রাজনৈতিক বিষয় নয়তো?
ফেসবুকে ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে বড় ধরণের সহিংসতার বিষয়টি বাংলাদেশে প্রথম এসেছিল সাত বছর আগে কক্সবাজারের রামুতে। তখন বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালানো হয়েছে।
এরপর একের পর এক ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে, রংপুরে এবং সর্বশেষ ভোলায়।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগ এনে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন তৎপর হয়েছে।
বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানায়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন মনে করে, বিষয়টি শুধু ইসলামের অবমাননা নয়, এর সাথে রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত।
ইসলামি সংগঠনগুলো এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব জানান দিতে চায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জোবাইদা নাসরিন বলেন, “এ ধরণের সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এবং সংগঠিত করে তারা মনে করিয়ে দিতে চায় যে তারা শক্তিশালী। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম এখনো বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
সেই রামু থেকে ভোলা পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশ বলেছে, ফেসবুক আইডি হ্যাক কিংবা কোন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর নাম ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি খুলে সেটির মাধ্যমে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে।
ইসলামি সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি সাখাওয়াত হোসেনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠামাত্রা তারা সাথে সাথে সক্রিয় ওঠেন কেন?
তিনি বলেন, ” ঘটনা তো ঘটছে। ঘটনা ঘটে নাই এমন তো না। যদি কোথাও ধর্ম অবমাননা বা রসুলুল্লাহ (সা:) কে কটূক্তি করা হয় তখনই মানুষ ক্ষুব্ধ হয়।”
“এখন বিষয় হচ্ছে – এটা কে করেছে, কারা করেছে, কোন ষড়যন্ত্র আছে কিনা, কোন আইডি হ্যাক করে করা হয়েছে কিনা -এটা যাচাই-বাছাই কিংবা তদন্ত করার দায়িত্ব প্রশাসনের।”
ইসলামি সংগঠনগুলোর ডাকে সাড়া দিয়ে যেসব মাদ্রাসা ছাত্র কিংবা সাধারণ মানুষ সক্রিয় হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
কোন ফেসবুক আইডিতে ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে কিংবা সেখানে কী লেখা হয়েছে, সেটি আসল আইডি কিনা এ সম্পর্কে অধিকাংশের কোন ধারণাই থাকেনা। কেন এমনটা হয়? প্রতিবাদকারীরা এগুলো যাচাই করার প্রয়োজন মনে করেন না কেন?
জোবাইদা নাসরিন বলেন, এটা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতার জোর।
তার মতে, “সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতা দেখানোর প্রবণতা থেকেই মানুষ যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন বোধ করে না।”
এদিকে সরকারও বলছে, গুজবের উপর ভিত্তি করেই অনেকেই সহিংসতায় জড়িয়ে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, গুজবে কান না দিয়ে তথ্য যাচাই করলে এ ধরণের পরিস্থিতি ঘটবে না।