অন্যান্যজাতীয়ভাইরালরাজনীতি

বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিশেষ বাহিনী, সত্য নাকি গুজব?

ঢাকার রাস্তায় বিশেষ পাক বাহিনী, সত্য নাকি গুজব?

বাংলাদেশের আদালত এলাকার একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ঢাকার রাস্তার দৃশ্য বলে প্রচার করেছে ভারতের ‘আজতক-বাংলা’সহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। পরে ঐ সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পাকিস্তান থেকে পাঞ্জাবের সোয়াত টিমের সদস্যরা ঢাকায় এসে টহল দিচ্ছে। তাছাড়া ঐ একইরকম একটি ভিডিওর মাধ্যমে রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে পাকিস্তানের বিশেষ সশস্ত্র বাহিনী প্রবেশ করেছে দাবি করা হয়। আসলেই কী তেমন কিছু ঘটেছে? কী বলছে এ ব্যাপারে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান?

আলোচিত ঐ ভিডিওতে বাংলাদেশের আইনজীবী নিঝুম মজুমদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। ভিডিওটির ৬ মিনিট ২০ সেকেন্ডে দেখা যায়- তিনি দাবি করছেন, ‘ঢাকার রাস্তাতে এই ধরনের পাকিস্তানি আর্মিরা এসে সোয়াতের ছদ্মবেশে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ছেলেরা বা পাকিস্তানি সৈন্যরা এসে বাংলাদেশের রাস্তায় নেমে মহড়া দিচ্ছে, এটা আমার কাছে নজিরবিহীন মনে হয়েছে।‘

পরবর্তীতে বাংলাদেশি স্বাধীন ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিওটি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর টহলের কোনো দৃশ্য নয়। বরং, ভিডিওটিতে যে বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে তারা বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত দল ক্রাইসিস রেসপন্স টিম বা সিআরটির সদস্য। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, সিআরটির সদস্যরা গত ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ নেয়ার সময় নিরাপত্তাকাজে নিয়োজিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম ভিডিওতে থাকা একজন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের পোশাকের পেছনে সিআরটি লেখা দেখতে পায়। পাশাপাশি আরেকজন সদস্যের পোশাকে বাংলাদেশের পতাকাও দেখতে পাওয়া যায়। এসবের সূত্রে ন্যাশনাল ডায়ালগ বাংলা তথা এনডিবি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৫ ডিসেম্বর এই সেই বাংলাদেশ সিআরটি শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি শর্টস ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

পরবর্তী অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজ২৪- এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৩ ডিসেম্বর প্রিজনভ্যান ঘিরে উত্তেজনা – ডিম হামলার শিকার সাবেক এমপি আসাদ | জাগো নিউজ- শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদকে রাজশাহীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ নেওয়ার সময় তার প্রিজন ভ্যানে হামলা করে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসময় তাকে নিরাপত্তা প্রদানকারী বাহিনীর পোশাকের সাথে আলোচিত ভিডিওর বাহিনীর পোশাকের হুবহু মিল রয়েছে। তাদের পোশাকের পেছনেও সিআরটি লেখা রয়েছে। এছাড়াও আদালত প্রাঙ্গণের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর স্থানের বেশ মিল দেখতে পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে সিআরটির বিষয়ে অনুসন্ধানে জাগোনিউজ২৪ -এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিআরটি বা ক্রাইসিস রেসপন্স টিম হলো বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত দল। দলটি জঙ্গি দমন ও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধসহ বড় ধরনের সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে।

এছাড়াও প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর পর সিলেটে আনুষ্ঠানিক মহড়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে পুলিশের এই বিশেষায়িত দলটি। অর্থাৎ, পুলিশের বিশেষায়িত দল সিআরটিকে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে। সুতরাং ভারতীয় মিডিয়ার সৌজন্যে ‘বাংলাদেশে পাকিস্তানের বাহিনী টহল দিচ্ছে‘ দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =

Back to top button