করোনাভাইরাসলাইফস্টাইল

ভাইরাস জ্বর নাকি করোনার থাবা? বোঝার কৌশল

মহামারি করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে আমাদের পুরো পৃথিবী। ইতোমধ্যেই এই মরণব্যাধির কারণে বদলে গেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন। আগে হলে সর্দি, কাশি, হালকা জ্বরে গুরুত্ব দেয়ারও সময় ছিল না অনেকের। ‘ও এমনিতেই সেরে যাবে’- এমন একটা গা ছাড়া ভাব থাকতো এসব অসুখের ক্ষেত্রে। তবে এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। সর্দি, কাশি কিংবা জ্বর তো বটেই, সামান্য গলা খুসখুস করলেও উদ্বিগ্ন হচ্ছেন সবাই। এর কারণও কারো অজানা নয়।

কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় ভাইরাস জ্বর দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। এই সময়ে জ্বর হলে তা সাধারণ ভাইরাস জ্বর নাকি করোনা ভাইরাস লক্ষণ- কী করে বুঝবেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে হালকা থেকে মাঝারি জ্বরের সঙ্গে গা ম্যাজম্যাজ, একটু সর্দি ভাব, কখনো নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধের মতো উপসর্গ থাকে। কাশিও হতে পারে তবে তা এমন যাতে মনে হয় কফ তোলার জন্য কাশছে, কিন্তু কফ উঠছে না। এ অবস্থায় খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। ঘরে বিশ্রামে থাকুন। গরম পানির ভাপ নিন। পর্যাপ্ত হালকা ও তরল খাবার খান। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল খান। মাস্ক পরে বাড়ির অন্যদের থেকে দূরে থাকুন। কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সংক্রমণের ভয় থেকে যায়।

ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর ও কষ্ট মোটামুটি ২-৩ দিন থাকে। তারপর কমতে শুরু করে। কিন্তু যদি তা না হয়, ৪-৫ দিন পরও জ্বর থাকে ও জ্বর বাড়তে শুরু করে, রোগী দুর্বল হয়ে পড়েন কিংবা ডায়রিয়া, সর্দি কমে গিয়ে শ্বাসকষ্ট বা কাশির মাত্রা বাড়তে থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করা উচিত।

সাধারণ ভাইরাস জ্বর কীভাবে বুঝবেন?

* খুব বেশি জ্বর নাও হতে পারে। হালকা গা গরম থেকেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ভাইরাল ফ্লু।

* জ্বরের সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, দুর্বল লাগা, স্বাদে অরুচি এগুলো অন্যতম লক্ষণ।

* বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জ্বরের সঙ্গে গা-হাত-পায়ে ব্যথা অনুভব থাকে।

* অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে নাক দিয়ে কাঁচা পানি ঝরা, সর্দি-কাশি দেখা দিতে পারে।

তবে কি জ্বর হলেই করোনা পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো?

চিকিৎসকদের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে এমনিতেই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তার উপর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টেস্ট করালে সেখান থেকেই রোগ এসে যেতে পারে। সংক্রমণের প্রথম অবস্থায় রিপোর্টেরও আবার ফলস পজিটিভ, ফলস নেগেটিভ আছে। তাই একবার পরীক্ষা হলেই তা নিয়ে নিশ্চয়তার কিছু নেই। তাই জ্বর এক দিন দু’দিন থাকলেই তা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া এমনিতেও কো-মর্বিডিটি না থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস এত হালকা ভাবে থাকে যে প্যারাসিটামল খেলে ও একটু বিশ্রামে থাকলেই ঠিক হয়ে যায়। কাজেই জ্বর এলেও প্রতিটি সিদ্ধান্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো নিন।

করণীয়

করোনা ভাইরাস ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সাবধান না হলে এমনিতেই আক্রান্ত হতে হবে। কাজেই সতর্ক থাকুন। বাড়িতে কারও জ্বরজারি হলে, সে ইনফ্লুয়েঞ্জা হোক কি করোনা ভাইরাস, তাকে সবার থেকে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করুন। রোগী ও পরিবারের সবাই ত্রিস্তরীয় মাস্ক পরুন। বারবার হাত ধুতে থাকুন। ইনফ্লুয়েঞ্জাও যথেষ্ট ছোঁয়াচে। যেকোনো একটি সংক্রমণ কিন্তু অন্য সংক্রমণকে ডেকে আনতে পারে। কাজেই সাবধানতার বিকল্প নেই।

তাই জ্বর হলেই দুশ্চিন্তা করবেন না। তাতে শরীর আরও দুর্বল হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দু-তিন দিনে সমস্যা কমে যাবে। কাজেই সাবধানে থাকুন। উপসর্গের গতি-প্রকৃতির দিকে নজর রাখুন ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চলুন। বেশিরভাগ লক্ষণ যদি করোনার সঙ্গে মিলে যায় তখন পরীক্ষা করাতে পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 1 =

Back to top button