বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের শিকার রিফাত জীবনের শেষ কথাটি তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নয়, তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রিকশাচালক দুলালকে বলেছিলেন।
সেদিনের ভয়াবহ ঘটনারই বর্ণনা দিয়েছেন ধারালো অস্ত্রের কোপে রক্তাক্ত রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রিকশাচালক দুলাল।
তিনি বলেন, ওইদিন কলেজ রোডে যাত্রী নিয়া গেছিলাম। মানুষের ভিড়ের কারণে আর সামনের দিকে যাইতে পারি নাই। শুনলাম সামনে একজনরে মারতাসে। প্যাসেঞ্জারকে নামায়ে আমি রিকশা ঘুরায়ে দাঁড়াইসি সেই সময়ই একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাঁইটা আইসা আমার রিকশায় উইঠাই কয়, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান। আর এটাই ছিল বেঁচে থাকা অবস্থায় রিফাতের শেষ কথা।
রিক্সাচালক দুলাল ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আরও বলেন, আমি দেখলাম ছেলেটার গলা ও বুকের বাম পাশ কাইটা রক্ত বাইর হইতাসে। হের জামাটা টাইনা আমি গলা ও বুকে চাইপা ধইরা হেরে কইলাম আপনি চাইপা ধরেন, আমি চালাই। আমি হাসপাতালে যাওনের জন্য কেবল সিটে উইঠা বসছি, চালামু, সেসময় একটা মেয়ে দৌড়ে রিকশায় উইঠা ওই পোলাডারে ধইরা বসে। আমি তাড়াতাড়ি রিকশা চালাইয়া হাসপাতালের দিকে যাই।
দুলাল আরো বলেন, এক মিনিটের মতো রিফাত ঘাড় সোজা করে বসে ছিল। এরপর সে সেই মেয়েটির কাঁধে ঢলে পড়ে যায়। আর কাঁধ সোজা করতে পারেনি। আমাদের রিকশার পাশাপাশি একটা লাল পালসার মোটরসাইকেলে দুইটা ছেলে যাচ্ছিল। মেয়েটি চিৎকার করে রিফাতের জখম চেপে ধরে রক্ত থামানোর জন্য তাদের কাছে কাপড় চাইছিলো, ওরা সাড়া দেয়নি। আমার কাছে মেয়েটি ফোন চায় বাড়িতে জানানোর জন্য, কিন্তু আমার ফোন নাই। পরে ওই মোটরসাইকেলের ছেলেদের কাছেও সে ফোন চায়। মেয়েটি বলে, ভাই আপনাদের একটা ফোন দেন, আমি একটু বাবার কাছে ফোন করব। কিন্তু তারা বলে, আমাদের কাছে ফোন নাই, তুমি হাসপাতালে যাইতেছো যাও।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢোকার সময় মেয়েটি একজন লোককে ডাক দেয়। রিকশা থামানোর সাথে সাথেই ওই লোক দৌড়ে আসে। রিফাতের অবস্থা দেখে সেই লোক স্ট্রেচার নিয়ে আসে। রিফাতকে রিকশা থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে করে অপারেশন থিয়েটারে দিয়ে আসি। রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আমার রিকশার ছবি তুলে নেয় আর কাগজপত্র নিয়ে যায়। আমার রিকশার কাগজপত্র এখনো পুলিশের কাছেই আছে।