বিচিত্র

মানবকল্যাণে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিলেন মার্কিন বিলিয়নিয়ার

শত কোটি ডলার বিত্তের মালিক হওয়া আমাদের জন্য জীবনের শীর্ষতম অর্জন হতে পারে। সিংহভাগ মানুষের জন্যেই যা কল্পনার অতীত এক স্বপ্ন।

চাক ফেনির বেলায় অবশ্য তা বলা যাবে না। শুধুমাত্র অতি-ধনী হওয়া তার জন্য যথেষ্ট নয়। নিজের জন্য আরও বড় লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন এ সমাজসেবক। দীর্ঘদিনের অর্জিত মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের সম্পদ মানবকল্যাণে বিলিয়ে দেওয়ার এ লক্ষ্য সম্প্রতি পূরণ করেও ফেলেছেন ৮৯ বছরের আইরিশ বংশদ্ভূত শীর্ষ মার্কিন এ ধনী। বিশ্বব্যাপী জনকল্যাণে এভাবেই নিজের ৯শ’ কোটি ডলারের ঐশ্বর্য বিলিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

আইরিশ বাবা-মার সন্তান ফেনি আদি আবাস উত্তর আয়ারল্যান্ডবাসীকেও ভোলেননি। নিজের দাতব্য সংস্থা আটলান্টিক ফিলানথ্রপির মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের নানা জনকল্যাণমূলক কাজে দান করেছেন ৫৭ কোটি ডলার।

চাক ফেনির পরিচয়:

চার্লস এফ ফেনি- ১৯৩১ সালের মহামন্দা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের এলিজাবেথ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

তার মা ছিলেন পেশায় একজন নার্স এবং বাবা বিমা কোম্পানির সামান্য কেরানি।

তবে তার পারিবারিক যোগসূত্র হচ্ছে আটলান্টিকের ওপারে আয়ারল্যান্ডে। এখানেই ফার্মানাঘ কাউন্টির কিনওয়ালে গ্রামে বড় হয়েছেন তার দাদীমা।

যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া ফেনি নিজের বিত্ত উপার্জন করেছেন, বিশ্বব্যাপী নানা দেশের ভ্রমণকারীদের কাছে শুল্কমুক্ত বিলাস পণ্য বিক্রি করে। কিন্তু, সে সম্পদ তিনি শুধু নিজের জন্য রাখতে নারাজ।

ফেনির আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ লেখক কনর ও’ক্লেরি বলেন, ”ডেল কার্নেগির ‘সম্পদ’ বিষয়ক লেখা ওকে খুবই অনুপ্রাণিত করে। ধনী হয়ে মারা যাওয়া লজ্জাজনক- কার্নেগির একথা তার মনে খুব আঘাত করে।”

এরপর তিনি ১৯৮২ সালে তার দাতব্য প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক ফিলানথ্রপি প্রতিষ্ঠা করেন। আন্তর্জাতিক এ সহায়তা তহবিল বিশ্বব্যাপী তার সম্পদ মহৎ সব উদ্যোগ ও প্রকল্পে অনুদান দিচ্ছে। দাতব্য সংস্থাটি মূলত; শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিরোধ নিরসন এবং মানবাধিকার রক্ষায় অর্থ বরাদ্দ দেয়।

প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ১৫ বছর নিজের সম্পদ খুবই সঙ্গোপনে বিলিয়েছেন এ ধনকুবের। এজন্য তাকে বলা হতো দাতব্য জগতের জেমস বন্ড। কেবলমাত্র ১৯৯৭ সালেই তার বিশাল দ্যানধ্যানের বিষয়টি জনসম্মুখে আসে।

ও’ক্লেরি জানান, ফেনির পাঁচ সন্তানের জন্য তাদের মা (ফেনির প্রথম স্ত্রী) কিছু অর্থ রেখে গেছেন। এটাই হবে তাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার।

বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী হেলগার সঙ্গে সান ফ্রান্সিসকো শহরের একটি দুই কক্ষের ছোট অ্যাপার্টমেন্টে আটপৌরে জীবন-যাপন করেন তিনি।

বৃহৎ অনুদান যারা পেয়েছে:

১৯৯৩ থেকে ২০১৫ সাল নাগাদ ফেনির দ্যানধ্যানের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হয়েছে কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট (কিউইউবি)। উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রটিকে প্রায় ১৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের সমান অনুদান দেন তিনি।

এছাড়া, ২০১২ সালে তার দাতব্য ফাউন্ডেশন কিউইউবি’কে আরও দুই কোটি ৪০ লাখ ডলার সাহায্য দেয়, যা ছিল তখন পর্যন্ত সংস্থাটির সর্ববৃহৎ একক অনুদানের রেকর্ড। বরাদ্দটি দেওয়া হয়েছিল; বিশ্ববিদ্যালয়টির ইনস্টিটিউড অব হেলথ সায়েন্সেস সেন্টার ফর এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিন- গবেষণা কেন্দ্রে।

কুইন্সের নাথালি ট্রট বলেন, ”এ অনুদানের মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন বদলে গেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এক গবেষণাগার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আটলান্টিক ফিলানথ্রপি এখন আর অনুদান দিচ্ছে না, তবে চাক ফেনি যে সাহায্য করেছেন; তার সুফল পাবে আগামীদিনের অসংখ্য প্রজন্ম।”

শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থায় জোরদান:

উত্তর আয়ারল্যান্ড ঐতিহাসিকভাবে ক্যাথলিক আর প্রোটেস্টান্ট মতালম্বী খ্রিস্টানদের ধর্মীয় সঙ্ঘাতের কেন্দ্রস্থল ছিল। এ অবস্থায় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে উত্তর আয়ারল্যান্ডে ফেনি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন।
বিগত কয়েক দশকে এ উদ্যোগে প্রায় ৮০ লাখ পাউন্ড সাহায্য দিয়েছেন তিনি। ১৯৯১ সালে আটলান্টিক ফিলানথ্রপি প্রথমে এখাতেই একটি স্বতন্ত্র তহবিল গঠন করেছিল।

আজ সমন্বিত শিক্ষার সুফল পাচ্ছে উত্তর আয়ারল্যান্ড। ফাইন্ডেশনের লাখ লাখ পাউন্ড সাহায্যে গড়ে ওঠা সমন্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হচ্ছে; ময়রা এলাকার রোয়ানডেলে ইন্টিগ্রেটেড প্রাইমারি স্কুল।
বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ফ্রান্সিস হিউজেস বলেন, আটলান্টিকের অনুদান ছাড়া আজ রোয়ানডেলে স্কুলের কোনো অস্তিত্বই থাকতো না।

তিনি জানান, ”২০০৭ সালে মাত্র ১৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টি জাত্রা শুরু করে। আর এবছর ভর্তি হয়েছে ৩০০ জন শিক্ষার্থী।”

”চাক ফেনির অনুদান সম্পর্কে এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রায় কিছুই জানে না। আমি তাদের এ সম্পর্কে বলতে চাই। আমার ধারণা, তারা সকলেই এ সম্পর্কে জেনে আনন্দিত হবে,” হিউজেস যোগ করেন।

সূত্র: বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 4 =

Back to top button