Lead Newsআন্তর্জাতিককরোনাভাইরাসস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

মানবদেহে করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষা শুরু আগামীকাল

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজারের বেশি মানুষ। আর ১৭ হাজারের বেশি মানুষ দেশটিতে করোনায় প্রাণ হারিয়েছে।

এরই মধ্যে করোনার সম্ভাব্য প্রতিষেধক তৈরি করে ফেলেছে যুক্তরাজ্য। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সে প্রতিষেধক পরীক্ষা করার জন্য মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক গতকাল মঙ্গলবার রাতে এমনটাই জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছিলেন, শিগগিরই তাঁরা একটি ভ্যাকসিন আনছেন। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তা পাওয়া যাবে বলেও জানান তাঁরা। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে জানান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ট্রায়াল (পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) এগিয়ে এনেছেন। তাঁরা এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথকেয়ার রেগুলেটরি এজেন্সির অনুমতি নিয়েছেন। ম্যাট হ্যানকক আরো জানান, অক্সফোর্ডের গবেষকদের ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রক্রিয়া আগামীকাল বৃহস্পতিবারই শুরু হয়ে যাবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিসিসি এ খবর জানিয়েছে।

ম্যাট হ্যানকক বলেন, এ পরীক্ষা সফল হলে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচবে। চলতি বছরের শরৎকাল পর্যন্ত এ প্রতিষেধকের জোগান দিতে পারবে যুক্তরাজ্য। এমনটাই জানিয়েছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

হ্যানকক আরো বলেন, ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সাহায্য করার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দুই কোটি পাউন্ড দেবে ব্রিটিশ সরকার। সেইসঙ্গে আরো সোয়া দুই কোটি পাউন্ড দেওয়া হবে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকদের। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার উৎসস্থল চীনের উহান শহরে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরই এ প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে জানান ম্যাট হ্যানকক। ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল সফল হলে যুক্তরাজ্যের মানুষের স্বার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।

করোনার ভ্যাকসিনটি তৈরির নেতৃত্বে থাকা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট সারাহ গিলবার্ট আগেই জানিয়েছিলেন, তাঁদের তৈরি ভেক্টর ভ্যাকসিন ইবোলার মতোই ‘সার্স-কভ-২ আরএনএ’ বা নভেল করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করবে বলে তাঁরা আশাবাদী। এডওয়ার্ড জেনার ইনস্টিউট ফর ভ্যাকসিন রিসার্চ ও অক্সফোর্ডের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে করোনাজনিত কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধী এ ভ্যাকসিন, যার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হয়েছে গত মাসেই। এবার সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীর ওপর এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এ জন্য ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৫১২ জনকে বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। ইংল্যান্ডের টেমস ভ্যালিতে মানুষের ওপর এ প্রতিষেধকের ট্রায়াল চলবে।

গত ১০ জানুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক সারাহ গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ড. স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল। এ ভ্যাকসিন তৈরির সঙ্গে সংযুক্ত জেনার ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজি বিভাগ। জেনার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল বলেন, ‘২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা মহামারির সময় ভ্যাকসিন তৈরির পথ দেখিয়েছিল অক্সফোর্ড। এবার আমাদের সামনে আরো বড় চ্যালেঞ্জ।’

অক্সফোর্ডের গবেষক ভাইরোলজিস্ট সারাহ গিলবার্ট বলছেন, দেহকোষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে তাঁদের তৈরি ভ্যাকসিন।

অক্সফোর্ডে ১৯৯৪ সাল থেকেই ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছেন সারাহ। তিনি বলেছেন, এ ভেক্টর ভ্যাকসিনের সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষমতা ৮০ শতাংশ। মানবদেহে এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা যদি সফল হয়, তাহলে এটাই হতে পারে করোনার যুগান্তকারী ভ্যাকসিন।

ভেক্টর ভ্যাকসিন সাধারণত তৈরি করা হয় কোনো রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস দিয়ে, যার উপরিভাগে থাকা প্রোটিনগুলো দেহকোষের মধ্যে ঢুকিয়ে কোষকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়া চলে। এ ভাইরাল প্রোটিনগুলো অ্যান্টিজেন কোডিং প্রোটিন হয়, যা মানুষের শরীরের কোষকে তার স্বাভাবিক অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরির জন্য উদ্দীপিত করে। এমন ভ্যাকসিনের উদাহরণ হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন। হেপাটাইটাস বি ভাইরাসকে ব্যবহার করেই ওই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল।

অক্সফোর্ডের করোনার প্রতিষেধক গবেষণার অন্যতম গবেষক অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, ‘ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে। সফল হলে এ ভ্যাকসিনের ডোজের মাত্রা ঠিক করা হবে। এ ভ্যাকসিন অনেক সুরক্ষিত ও নিরাপদ। মহামারি ঠেকাতে ভ্যাকসিনটি সার্বিকভাবে কাজে আসবে।’

মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স মহামারি ঠেকাতে আগেও ভ্যাকসিন তৈরি করেছে সারাহ গিলবার্টের দল। মার্স ও সার্সের সঙ্গে মিল রয়েছে করোনাভাইরাসের। তাই অক্সফোর্ডের এ করোনা ভ্যাকসিন কাজে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। অধ্যাপক গিলবার্ট বলেছেন, ভ্যাকসিনের ট্রায়াল সফল হলে সবার আগে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কর্মীদের ওপর তা প্রয়োগ করা হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, যাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, আগে তাঁদের ওপরই করোনার এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine + 10 =

Back to top button