Lead Newsকরোনাভাইরাস

মিশ্র টিকা ব্যবহারের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্ক বার্তা

 

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি টিকার মিশ্র ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই পদ্ধতিতে টিকাদানের ফলাফল নিয়ে খুব কম তথ্য থাকায় বিষয়টিকে ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংস্থাটির প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান। সোমবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এখানে কিছুটা বিপজ্জনক প্রবণতা তৈরি হয়েছে। টিকার মিশ্র ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ নেই।

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে করোনা টিকার ব্যাপক সংকটের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে সেগুলোর সুরক্ষা ক্ষমতার স্থায়িত্ব নিয়েও। এ অবস্থায় বেশ কিছু দেশ টিকার মিশ্র ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। গত সোমবার থাইল্যান্ড ঘোষণা দিয়েছে, তারা সিনোভ্যাক ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার মিশ্র ডোজ ব্যবহার করবে।

থাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং উচ্চমাত্রার ইমিউনিটি তৈরির লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মিশ্র টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমে সিনোভ্যাকের ডোজ এবং এর তিন বা চার সপ্তাহ পরে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডোজ দেয়া হবে।

এর আগে, থাইল্যান্ডে ৭০০ মেডিক্যাল কর্মীর ওপর পরিচালিত একটি প্রাথমিক গবেষণায় ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, সিনোভ্যাক টিকার দুই ডোজ নেয়ার পর প্রথম ৬০ দিন শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ দেখা যায়। তবে এরপর থেকেই ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে এবং প্রতি ৪০ দিনে অ্যান্টিবডির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়।

থাম্মাসাত ইউনিভার্সিটির গবেষক সিরা নানথাপিসাল বলেন, আমাদের গবেষণা অনুসারে, যেসব মেক্যিাল কর্মী সিনোভ্যাকের দুই ডোজ নিয়েছেন, তাদের অবশ্যই বুস্টার শট নেয়া উচিত। সেটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজার যে কারো টিকা হতে পারে। অবশ্য এ গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

থাইল্যান্ডের মতো টিকার মিশ্র ডোজ ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে জার্মানিও। চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশটির স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ভ্যাকসিন বলেছে, যারা প্রথম ডোজ কোভিশিল্ড নিয়েছেন তারা চাইলে শেষ ডোজ ফাইজার বা মডার্নার টিকা নিতে পারেন। মিশ্র টিকা শরীরের জন্য বেশি কার্যকর। তবে তা নিতে হবে এক মাসের মধ্যে।

এরপর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাতেও মিশ্র ডোজ ব্যবহারে উপকারের কথা জানানো হয়েছে। ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুটি ডোজে করোনা থেকে বেশি সুরক্ষা মিলছে নাকি আলাদা দুই টিকার সংমিশ্রণে উপকার বেশি তা পরীক্ষা করা হয়েছে কম-কোভ ট্রায়াল নামে ওই গবেষণায়। এর ফলাফলে দেখা গেছে, দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টিকার সংমিশ্রণেই মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তৈরি হচ্ছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় ৫০ বছরের বেশি বয়সী ৮৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেন। এতে দেখা যায়- অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজের তুলনায় দুই ধরনের টিকার সংমিশ্রণে শরীরে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দিলে তুলনামূলক বেশি অ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি হয়। কিন্তু ফাইজারের টিকার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিলে ততটা উপকার পাওয়া যায় না।

তবে ফাইজারের দুই ডোজের পর শরীরে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে। আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পর ফাইজারের টিকা দেয়া হলে সবচেয়ে বেশি টি-সেল তৈরি হয়েছে।
তবে সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী বলএছন, টিকার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ হিসেবে কোন টিকা কখন নেয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত যদি নাগরিকেরা নেন, তাহলে দেশে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

সূত্র: রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =

Back to top button