লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়তে চাওয়ার খবর পুরনো। বার্সেলোনা তাকে সহজে ছাড়তে চায় না, সেটিও নতুন খবর নয়। এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা হলেও বার্সা-মেসি বিচ্ছেদ নাটকে সত্যিকারের কোনো অগ্রগতি নেই।
দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় বার্সা-মেসির দুই দশকের সম্পর্কটা নোংরা এক ছাড়াছাড়ির দিকে এগোচ্ছে। প্রাণপ্রিয় দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের জন্য শেষ পর্যন্ত হয়তো আদালতেই যেতে হবে মেসিকে।
ক্লাব তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি না হাওয়ায় কাল মেসিও জানিয়ে দিয়েছেন আপাতত তিনি অনুশীলন করবেন না। আজ করোনা পরীক্ষা করাবেন না বার্সেলোনা অধিনায়ক।
ক্লাবের বর্তমান বোর্ডের সঙ্গে যতই তিক্ততা থাকুন না কেন, মেসি চাননি বিদায়বেলায় সম্পর্কটা খারাপ হোক। এজন্যই গত পরশু ক্লাবকে ফের বুরোফ্যাক্স পাঠিয়ছিলেন। জানিয়েছিলেন, বিদায়ের প্রক্রিয়াটা দু’পক্ষের জন্যই যাতে সুষ্ঠু হয় সেটা নিশ্চিত করতে বার্সেলোনার আইনজীবীদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত তার আইনজীবীরা।
কিন্তু মেসির আলোচনার প্রস্তাব মনে ধরেনি বার্সেলোনার, সঙ্গে সঙ্গে সেটি নাকচ করে দিয়েছে। জানিয়েছে, শুধু একটি শর্তেই মেসির সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসবে তারা, সেটির সম্ভাবনা অবশ্য নেই বললেই চলে। মেসি যদি দলবদলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে চুক্তি নবায়ন করেন, তাহলেই শুধু আলোচনা হতে পারে! অন্যথায় মেসির সঙ্গে কোনো কথা নয়।
এখন নিজের উদ্যোগে বার্সার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে মেসি চলে যেতে চাইলে আগ্রহী ক্লাবকে রিলিজ ক্লজের পুরো ৭০০ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করতে হবে। মেসিকে পেতে আগ্রহী ক্লাবের সংখ্যা কম নয়। ৩৩ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে দলে টানার দৌড়ে ম্যানসিটি, পিএসজি ও ইন্টার মিলানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জুভেন্টাসও। স্প্যানিশ মিডিয়া অবশ্য বলছে, ম্যানসিটিতে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছেন মেসি।
সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা এখন বার্সেলোনায় ছুটি কাটাচ্ছেন। সাবেক শিষ্যের সঙ্গে নিয়মিতই তার যোগাযোগ হচ্ছে। তবে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে মেসিকে কেনার সাধ্য নেই সিটিরও। বার্সার সঙ্গে মেসির চুক্তি ২০২১ সাল পর্যন্ত। সেই চুক্তির একটি বিশেষ ধারা কার্যকর করে বিনা ট্রান্সফর ফি’তে দলবদল করতে চান আর্জেন্টাইন জাদুকর। সেজন্য অবশ্য গত ১০ জুনের মধ্যে সিদ্ধান্তটা ক্লাবকে জানানোর বাধ্যবাধকতা ছিল।
কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে মৌসুম প্রলম্বিত হওয়ায় মেসির আইনজীবীরা মনে করছেন আগস্টে সিদ্ধান্ত জানালেও ধারাটি কার্যকর থাকবে। এই যুক্তি আবার মানতে নারাজ বার্সেলোনা। এজন্যই বিষয়টি আদালতে গড়ানোর প্রশ্ন উঠেছে।
মেসি নিজেও জানেন, বিনামূল্যে হয়তো ক্লাব ছাড়া সম্ভব হবে না তার পক্ষে। এজন্যই একটা সমাধানের লক্ষ্যে ক্লাবের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বার্সা তাতে রাজি না হওয়ায় এবার আরও কঠোর হতে পারেন মেসি। সোমবার ক্লাবের অনুশীলনে যোগ দেয়ার আগে আজ করোনা পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা তার।
শোনা যাচ্ছে, আইনজীবীদের পরামর্শে করোনা পরীক্ষা না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেসি। এতে নিশ্চিতভাবেই তিক্ততা আরও বাড়বে। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা কাল জানিয়েছে, গত এপিলেই দলবদলের সিদ্ধান্ত নেন মেসি। জুলাই মাসে ব্যাপারটি জানতে পেরেও গুরুত্ব দেয়নি বার্সা কর্তৃপক্ষ। ২৫ আগস্ট মেসি বুরোফ্যাক্স পাঠানোর পর টনক নড়ে তাদের। এ ব্যাপারে মেসিকে আইনি পরামর্শ দেয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বার্সা। এদিকে আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে আরও ক্ষেপে গেছেন মেসি। অবস্থা এখন এতটাই সঙ্গিন যে, সভাপতির পদ থেকে বার্তোমেউ পদত্যাগ করলেও বার্সায় থাকবেন না মেসি।