মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেয়া হলো স্কুলমাঠ!
তাহেরপুর-পুঠিয়া সড়কের নির্মাণসামগ্রী রাখতে ঠিকাদারের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে স্কুল মাঠ। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ধোকড়াকুল হাইস্কুলের খেলার মাঠ দুই বছরের জন্য ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমানে স্কুল খোলা রয়েছে। কিন্তু খেলার মাঠ বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থী খেলাধুলা করতে পারছে না বলে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার উপজেলার ধোকড়াকুল হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, পুঠিয়া-তাহেরপুর সড়কের ঠিকাদার স্কুলের খেলার মাঠে সড়কে বিভিন্ন রকম নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। মাঠের ভেতর রড, ইট-পাথর বালি জমা করা। মাঠের পশ্চিম পার্শ্বে ঠিকাদার স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য পাকা আবাসিক ঘর নির্মাণ করেছেন। ঠিকাদারের প্রায় ৩০ হতে ৪০ জন শ্রমিক বিভিন্ন কাজ করছেন।
শ্রমিকরা বলেন, “পুঠিয়া হতে বাগমারা উপজেলা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক ও বিভিন্ন স্থানে কালভাট নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই ঠিকাদারের নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য এই মাঠ ভাড়া নেওয়া হয়েছে।”
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, “আশেপাশের এলাকার ভেতরে ছেলে মেয়েদের একটিমাত্র খেলার মাঠ ধোকড়াপুল হাইস্কুলের মাঠ। সেটাও স্কুল কর্তৃপক্ষ অর্থের বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছে বলে শুনেছি। বর্তমানে স্কুল খোলা রয়েছে। কিন্তু খেলার মাঠ বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষক বলেন,”পুঠিয়া-তাহেরপুর সড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে দুই বছরের জন্য প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি ভাড়া দিয়েছে। প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু এই টাকা প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন খাতা-কলমে কত টাকা চুক্তি করেছে তা আমাদের নিকট জানাননি।”
ধোকড়াকুলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, “মাঠটি আমাদের না, হাইস্কুলের মাঠ। ক্লাসের পর ফাঁকা সময়ে প্রাথমিকের ছেলে-মেয়েরা এই মাঠে খেলাধুলা করত। কিন্তু এখন সম্পূর্ণ মাঠে সড়ক নির্মাণের বিভিন্ন রকম সামগ্রী রাখা হয়েছে। সেই সাথে আমাদের স্কুলে আসা যাওয়ার জন্য মাত্র ১২ ফিট রাস্তা রাখা হয়েছে। ছোট্ট ছোট্ট ছেলে-মেয়েদের বড় বালি পাথর, ইটের খোয়ার ভেতর দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে। অনেকের এগুলোর ভেতর দিয়ে আসতে গিয়ে পায়ে আঘাত লাগছে। আমাদের করার কিছু নেই।”
ধোকড়াকুল হাইস্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, “স্কুল মাঠ কিভাবে এবং কত টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক বলতে পারবেন।”
হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম মাঠ ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “মাঠটিতে বর্ষাকালে পানি জমে থাকে। আমি মাঠটি উঁচু করার জন্য সড়কের নির্মাণ সামগ্রী রাখাতে দিয়েছি। চার বিঘা মাঠটিতে উঁচু করতে অনেক টাকার মাটি ফেলতে হতো।”
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা আক্তার জাহান বলেন, “এখন স্কুলে পাঠদান শুরু হয়েছে। দীর্ঘ দিন স্কুল মাঠ ভাড়া দেওয়ার কোনো বিধান নেই। আর যদি ভাড়া দিয়ে থাকেন,এর সকল প্রকার দায়দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।”