ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে বিদায় করে ইউরোপা লিগের ফাইনালে সেভিয়া
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে পরাজিত করে ইউরোপা লিগের ফাইনালে পৌঁছে গেছে সেভিয়া। জার্মানীর কোলনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে এই পরাজয়ের মাধ্যমে ওলে গানাল সুলশারের দল এবারের মৌসুমে তৃতীয় সেমিফাইনালে পরাজিত হবার তিক্ত স্বাদ পেল। ম্যাচ শেষে ইউনাইটেড বস স্বীকার করেছেন গত কয়েক সপ্তাহ যাবত ইউনাইটেড ট্রান্সফার মার্কেট নিয়ে ব্যস্ত ছিল যার প্রভাব দলে উপর পড়েছে।
অথচ ম্যাচের ৯ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেসের স্পট কিকে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। ২৬ মিনিটে সুসো সেভিয়ার হয়ে সমতা ফেরান। গোলরক্ষক বোনোর কল্যানেই মূলত সেভিয়া এরপর ম্যাচে টিকে ছিল। ৭৮ মিনিটে বদলী খেলোয়াড় লুক ডি জংয়ের গোল স্প্যানিশ দলটির জয় নিশ্চিত হয়। গত কয়েক বছর যাবতই ইউরোপা লিগে নিজেদের যোগ্যতার প্রমান দিয়ে চলেছে সেভিয়া। এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা।
প্রিমিয়ার লিগে তৃতীয় স্থান অর্জন করায় ইতোমধ্যেই আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিশ্চিত করেছে ইউনাইটেড। কিন্তু আরো একবার সুলশারের বদলী বেঞ্চের উপর অনাস্থার খেসারত দিতে হলো রেড ডেভিলসদের। ম্যাচ শেষের তিন মিনিট আগে পর্যন্ত সুলশার একজন খেলোয়াড়কেও পরিবর্তন করার সাহস পাননি। ইউনাইটেডের নতুন মৌসুম শুরু হতে চার সপ্তাহ বাকি রয়েছে। যে কারনে ট্রান্সফার মার্কেটে কিছুটা দৌঁড়ঝাপ বাধ্য হয়েই শুরু করতে হয়েছে সুলশারকে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ইংলিশ উইঙ্গার জেডন সানচোকে দলে ভেড়াতে চাইছে ইউনাইটেড। কিন্তু আগামী মৌসুমে জার্মানী ছাড়তে রাজী হচ্ছেন না এই উইঙ্গার।
সুলশার বলেছেন, ‘যথাসময়ে দল অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে। দীর্ঘ মৌসুম আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে। আমি জানি না ট্রান্সফার প্রকিয়া কিভাবে সম্পন্ন হবে। কিন্তু আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য শতভাগ নিশ্চিত হওয়াটা জরুরি।’
এই নিয়ে সেভিয়া ইউরোপা লিগের নক আউট পর্বে শেষ ২৬টি ম্যাচেই ২৫টিতেই জয়লাভ করলো। শুক্রবারের ফাইনালে ষষ্ঠবারের মত শিরোপা ঘরে তোলার ব্যপারে তারা দারুন আশাবাদী। সেভিয়া বস জুলেন লোপেতেগুই বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরে এটাই ইউনাইটেডের সেরা দল ছিল। তাছাড়া ইংল্যান্ডের দল হওয়ায় আমাদের জন্য ম্যাচটা আরো বেশী কঠিন হয়ে উঠেছিল। ফাইনালের জন্য এখন আমার মুখিয়ে আছি। এজন্য আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।’
২০১৮ সালে বিশ^কাপ শুরু হবার আগ মুহূর্তে রিয়াল মাদ্রিদের কোচের পদ নিশ্চিত করার কারনে স্প্যানিশ জাতীয় দল থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর মাত্র এক মাসের মাথায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যু থেকেও তাকে চলে যেতে হয়। যে কারনে গত দুই বছর বেশ কঠিন সময় পাড় করেছেন লোপেতেগুই। কিন্তু সেভিয়ার পুনর্জাগরনে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ক্লাব রেকর্ড টানা ২০ ম্যাচে তারা অপরাজিত রয়েছে।
যদিও ইউনাইটেডের আক্রমনভাগের চার তারকার কারনে সেভিয়াকে বেশ কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়েছিল। দিয়েগো কার্লোসকে কাটিয়ে মার্কোস রাশফোর্ডের শট রুখে দেন বোনো। মৌসুমের শুরুতে স্পট কিক থেকে ইউনাইটেডের ব্যর্থতাকে অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন ফার্নান্দেস। ক্লাবের হয়ে তার অষ্টম পেনাল্টিতে ইউনাইটেড ৯ মিনিটে এগিয়ে যায়। এটি ছিল এবারের মৌসুমে রেড ডেভিলসদের ২২তম পেনাল্টি। ২৬ মিনিটের মধ্যেই অবশ্য ম্যাচে ফিরে আসে সেভিয়া। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ধারে খেলতে আসা লেফট-ব্যাক সার্জিও রিগুইলোনের ক্রস থেকে লিভারপুলের সাবেক উইঙ্গার সুসো সেভিয়ার পক্ষে সমতা ফেরান। কোলনে দর্শকশুন্য মাঠে সেভিয়া যেন হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। সমর্থকদের অনুপস্থিতি কোনভাবেই সমস্যায় ফেলত পারেনি দলটিকে। উল্টো বদলী বেঞ্চের সকল খেলোয়াড়, স্টাফ, ক্লাব পরিচালকদের উচ্ছসিত সমর্থনে এক অন্যরকম দল হয়ে উঠেছির সেভিয়া। যদিও লোপেতেগুই স্বীকার করেছেন সমর্থকদের সমর্থন যেকোন দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ইউনাইটেড কিছুটা আক্রমনাত্মক হয়ে উঠলেও বোনোর তৎপরতা ও বাজে ফিনিশিংয়ে কাঙ্খিত গোল পায়নি ইংলিশ জায়ান্টরা। এ্যান্থনি মার্শালকে তিনবার হতাশ করেছেন বোনো। ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা লুকাস ওকাম্পোসের পরিবর্তে ৫৬ মিনিটে ডি জংকে মাঠে নামান লোপেতেগুই। আর তারপরই দলের ভাগ্য ঘুড়ে যায়। স্পেনে প্রথম মৌসুমটা ভাল না কাটলেও নিজেকে প্রতিদিনই প্রমান করার জন্য লড়াই করে গেছেন এই ডাচ এ্যাটাকার। ৭৮ মিনিটে ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক উইঙ্গার নাথাসের ক্রস থেকে ডি জংয়ের জয়সূচক গোল তারই প্রমান।