শহরে-শহরে, জেলায়-জেলায় রাজপথ দখল করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে জানিয়েছে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, দেশের ১৬ আনা স্বৈরতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে, কোনকিছুই জনগণের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ অবস্থায় দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে আনতে জনগণের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন। জনগণ মানষিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে, তারা আর সহ্য করতে পারছেনা। জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথ দখল করতে হবে।
শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার’ আহ্বানে গণসংহতি আন্দোলনের ৪র্থ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের ১৬ আনাই স্বৈরতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে। অর্থনীতি-শাসনব্যবস্থা কোনকিছু জনগণের নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজন ঐক্য। জেলায়-জেলায় শহরে-শহরে জনগণকে সংঘবদ্ধ করে জাতীয় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
জনগণ মানষিকভাবে প্রস্তুত হয়ে আছে, তারা আর সহ্য করতে পারছেন না। মানুষের মধ্যে ঐক্য হয়ে আছে, এখন প্রয়োজন সেটার আনুষ্ঠানিক একটা রূপ দেওয়া। পরিবর্তন আনতে হলে প্রয়োজন জনগণের ঐক্য। অবিলম্বে আমাদের রাজপথে নামতে হবে, বাড়িতে বসে থাকা যাবেনা। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথ দখল করতে হবে।
দেশের যে মালিকানা আত্মসাত হয়েছে, রাজপথ দখল করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, সারাদেশে রাজপথ যখন দখলে আসবে, জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হবে তখন হোন বাধাই আর বাধা থাকবেনা। মানুষ প্রস্তুত হয়ে আছে, আপনারা যখন পথে নামবেন তখন লাখ-লাখ মানুষকে পাশে পাবেন। রাজপথে নামলে আমরা সফল হবো।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গত ১৩ তারিখে কুমিল্লার মন্দিরে ঘটনা ঘটলো আর আজকে ধর্মমন্ত্রী সেখানে বেড়াতে গেলেন। এ ঘটনায় এখন উদোর পিন্ডি ভুদোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য নতুন জজ মিয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
উপস্থিত ড. কামালকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার কাছে আবেদন সবাইকে মাফ করে দিয়ে আমাদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে থাকবেন। রাজপথে থেকে অগণতান্ত্রিক এই নির্বাচনকে আমরাই প্রতিহত করতে পারি। একত্রে থেকে রাস্তায় নামলে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
রোহিঙ্গা সমস্যা ভারতের সৃষ্টি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারতের কথা শুনে রোহিঙ্গারা আমাদের উপর চেপে বসেছে। এখন রোহিঙ্গাদের আত্মরক্ষার শিক্ষা দিতে হবে। তাদেরকে প্রশিক্ষিত করতে হবে, প্রয়োজনে অস্ত্র দিতে হবে, মদদ দিতে হবে। যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের আরাকান দখলে নিতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনে প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, গণসংহতি আন্দোলন স্পষ্ট করে ঘোষণা করে এটি গণমানুষের গণমানুষের রাজনৈতিক দল। বিরাজমান রাজনৈতিক ক্ষমতা, আইনী ব্যবস্থাসহ সকল বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সকল মজলুমের পক্ষে আন্দোলন করবে গণসংহতি আন্দোলন। জনগণের স্বার্থের বাইরে আলাদা কোন স্বার্থ দেখেনা গণসংহতি আন্দোলন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অধিকার ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবে।
তিনি বলেন, করোনার কারণে মানুষের কাজ নেই, কিন্তু বাজারে গিয়ে দ্বিগুন-তিনগুন দামে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনছে। আর এক মন্ত্রী বলছেন আমরা নাকি বেশি ভাত খাচ্ছি। ফেসবুকে দুই লাইন লিখলে আপনারা কাউকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসছেন, আর এতোগুলো পূজামন্ডপে হামলা হলো সেগুলো প্রতিরোধ করতে পারেননা।
রাজনীতিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকারের কাছ থেকে মুক্তি ছাড়া কোন উপায় নেই। সরকার একের পর এক মূলা ঝুলিয়েছে আমাদের সামনে। আপনারা বলেছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন, আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছি। তারমানে এই নয় আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিনিময়ে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিবেন।
যে দেশে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তারচেয়ে বড় জবরদস্তি হতে পারে না। আবারো একটা নিশিরাতে ভোট করার পায়তাঁরা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা আরেকটা ভোট ডাকাতি হতে দেবোনা। সকল দলের প্রতি আহ্বান, যার যার অবস্থান থেকে ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে হবে।
জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, আসুন লড়াই করে, অভ্যুত্থান করে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাই। সম্মিলিত গণজোয়ারের মাধ্যমে অভ্যুত্থান একমাত্র সমাধান। এ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য আসুন লড়াই করি।