আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক্ক, করসহ সব ধরনের রাজস্বের লেনদেন ই-পেমেন্টের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে দেশের সব কাস্টম হাউস ও স্টেশনে এ ব্যবস্থা চালু হবে।
আগামী বছরের এপ্রিল থেকে কমলাপুর আইসিডি কাস্টম হাউসে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থায় রাজস্ব পরিশোধ শুরু হবে। এরপর ওই বছরের ১লা জুলাই থেকে দেশের সব কাস্টম হাউস ও স্টেশনে ২ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব ই-পেমেন্টের মাধ্যমে জমা বাধ্যতামূলক করা হবে। সবশেষে ২০২২ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে সব কাস্টম হাউস ও স্টেশনে সব ধরনের পণ্য চালানের রাজস্ব ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। জাল-জালিয়াতি বন্ধ এবং রাজস্ব আহরণ গতিশীল ও স্বচ্ছ করার জন্য ই-পেমেন্ট চালু করা জরুরি বলে মনে করে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ই-পেমেন্টের অর্থ হচ্ছে, ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থা। কাস্টম হাউসে এ ব্যবস্থা চালু হলে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে রাজস্ব বাবদ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের আরটিজিএসের (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) মাধ্যমে সরকারের ট্রেজারি অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা হবে।
আমদানি পর্যায়ে সহজে শুল্ক্ক-কর পরিশোধের জন্য এনবিআর ২০১৭ সালে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম চালু করে।
আরটিজিএস ব্যবহার করে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা জনপ্রিয় করা ছিল অ্যাসাইকুডা চালুর মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু পদ্ধতিটি বাধ্যতামূলক না করায় এর সুফল পাচ্ছে না এনবিআর। এনবিআরের এক হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধিত রাজস্বের পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৫ই মার্চ পর্যন্ত এই ব্যবস্থায় চার হাজার ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে।
এনবিআরের সদস্য খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-পেমেন্টের মাধ্যমে রাজস্ব জমা করা বাধ্যতামূলক না হওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শুল্ক্ক-কর পরিশোধের আধুনিক পদ্ধতির সেবা থেকে আমদানিকারকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
অন্যদিকে, জাল চালান দাখিলের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। কম রাজস্ব দিয়ে বেশি রাজস্ব জমার জাল দলিল তৈরি হচ্ছে। আবার মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক অফিসের সঙ্গে এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহবিষয়ক হিসাবে গরমিল থাকছে। এ অবস্থায় জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধে দ্রুততার সঙ্গে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা জরুরি। এতে রাজস্ব সংগ্রহ সহজ হবে এবং স্বচ্ছতা বাড়বে।