কূটনীতিজাতীয়

রোহিঙ্গা ফেরতে চাপ অব্যাহত রাখার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র চাপ অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ‘সম্মানের সহিত ও নিরাপদে’ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের অন্যান্য রাষ্ট্র মিলে যা যা করা দরকার তা সবই করা হবে।

শনিবার সকালে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অস্টমীর চরে অবস্থিত নটারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে আর্ল আর মিলার এসব কথা বলেন। খবর ইউএনবি’র।

‘রোহিঙ্গাদের সাহায্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের পাশে আছে, সবসময় থাকবে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ উদারতার সহিত রোহিঙ্গাদের যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে সেটা প্রশংসার দাবিদার।

সকল রোহিঙ্গার স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদায় সঙ্গে ও টেকসই উপায়ে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করা উচিত।’

তিনি উল্লেখ করেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যারা তাদের ৫৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা করেছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছেন। তাদের বেশির ভাগই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বর্বর অভিযান থেকে জীবন বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করে। পরে দুই দেশ ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামে চুক্তি করে। ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন শুরুর দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

রোহিঙ্গাদের প্রথম দলের ফেরার কথা ছিল গত বছরের ১৫ নভেম্বর। কিন্তু রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি না হওয়ায় এ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয়বারের মতো এমন পদক্ষেপ নেয়া হয় গত বৃহস্পতিবার। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির পরও রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছার কারণে সেটাও আটকে যায়।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেন, বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার জনগণ ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য এক লাখ ডলার প্রদান করবে। এতে ১ হাজার ২০০ পরিবারের ৪ হাজার ৯শ’ মানুষ সহায়তা পাবে। শনিবার এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি।

চিলমারীর নটারকান্দি হাইস্কুল মাঠে ত্রাণ বিতরণের আগে চরাঞ্চলের বিভিন্ন বাড়ি ঘুরে ঘুরে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন রাষ্ট্রদূত। এসময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। এসময় এই চরাঞ্চলের শতাধিক পরিবারকে নগদ ৪ হাজার ৫শ’ টাকা, গৃহস্থালি সামগ্রী এবং মহিলা ও কিশোরী মেয়েদের স্বাস্থ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এখানে ১০টি প্রতিবন্ধী পরিবারের মাঝে নগদ সাড়ে ৫ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নসহ সাবির্ক কার্যক্রম তদারকি করছেন। ত্রাণ বিতরণের সময় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান, ইউএসএইড বাংলাদেশের মিশন ডাইরেক্টর ডেরিক ব্রাউন, কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়া চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত আলী বীরবিক্রম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + sixteen =

Back to top button