লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর অজানা অধ্যায়
সুদর্শন এবং মেধার দারুণ সমন্বয়ে তৈরি যে ছেলেটা ক্যারিয়ারের শুরুতেই অস্কার নমিনেশন পেয়ে যায়। অতঃপর রোমান্টিক হিরো হিসেবে ব্যবসায়িক সাফল্যের সাথে জনপ্রিয়তাও অর্জন করে। তার হয়তো চকলেট রোমান্টিক হিরো হয়ে থাকবারই কথা ছিলো। অথচ সেই ইমেজকে ভেঙে চুরে একজন পরিপক্ক অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন নিজেকে। এ কারণেই তার প্রতি ভালোবাসার সাথে মুগ্ধতাও চলে আসে।
টিভি সিরিজ এর মাধ্যমে ১৯৮৯ সালে ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করলেও চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটে ১৯৯১ সালে Critters 3 মুভির মাধ্যমে। ১৯৯৩ সালে নিজ মেধার পরিচয় দেন What’s Eating Gilbert Grape সিনেমার মাধ্যমে। লেজেন্ডারি জনি ডেপের সাথে পাল্লা দিয়ে সেই কৈশোর বয়সেই বাগিয়ে নেন প্রথম অস্কারের নমিনেশন। তবে স্পটলাইটে আসেন ১৯৯৭ সালে টাইটানিক সিনেমার সুবাদে; অতঃপর ব্যবসায়িক সাফল্য ও জনপ্রিয়তা, দুটোই লাভ করেন। The Man in the Iron Mask (1998), The Beach (2000), Gangs of New York (2002), Catch Me If You Can (2002), The Aviator (2004), The Departed (2006), Blood Diamond (2006), Body of Lies (2008), Revolutionary Road (2008), Shutter Island (2010), Inception (2010), J. Edgar (2011), Django Unchained (2012), The Great Gatsby (2013), The Wolf of Wall Street (2013), The Revenant (2015), Once Upon A Time… In Hollywood (2019)— সিনেমার নামগুলো দেখুন, তার পারর্ফমেন্স দেখুন। যেকোনো অভিনেতার ফিল্মোগ্রাফীতে এই সিনেমাগুলোর কয়েকটা থাকলেই তার অভিনয় জীবন সার্থক হবার কথা, অথচ লিও একের পর এক এই মুভিগুলোতে নিজেকে ভেঙ্গে গড়েছেন বারবার একজন পাঁকা অভিনেতা হিসেবে।
অথচ, A.I. Artificial Intelligence (2001) মুভির সেই শিশুশিল্পী (Haley Joel Osment) যে কিনা নীল পরীর সন্ধ্যানে ঘুরে বেড়ায়, তার কথা মনে আছে? বাচ্চা বয়সেই এ মুভিটাসহ Forrest Gump (1994) এবং The Sixth Sense (1999) এর মাধ্যমে দৃষ্টি কেড়েছিলেন সবার। মনে করা হতো আমাদের প্রজন্মের নক্ষত্র হবে সে। কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেলো শেষে? মাঝেমধ্যে কিছু ক্যামিও, অ্যাভারেজ মুভি আর টুকিটাকি টিভি সিরিজে তার খোঁজ পাওয়া যায়। এখানেই তফাৎটা গড়েছেন ক্যাপ্রিও। তিনি হারিয়ে জাননি, একটু একটু করে নিজেকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছেন সেরাদের কাতারে; নিজের সর্বোচ্চ মেধার বিকাশ ঘটানো বন্ধ করেননি এখনো। ধরুন, টাইটানিক এর মাধ্যমেই কেউ নিয়মিত মুভি দেখা শুরু করলো। গত ২৩ বছরে সে যদি মুভি অ্যাডিক্টেডে পরিণত হয়, তবে কম করে হলেও হাজারখানে মুভি দেখে ফেলেছে সে। সিনেমার ক্রাফটস্, নির্মাণশৈলী, গঠন বা ত্রুটিসমূহ কিছুটা হলেও এখন সে বুঝতে শিখেছে।
তাকে শুধু আর ঐ টাইটানিক দিয়েই বুঝ দেয়া যাবেনা সহজে, তার মন জয় করতে হলে গ্যাংস অফ নিউইয়র্ক, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান, দ্যা এভিয়েটর, দ্য ডিপারটেড, ব্লাড ডায়মন্ড, বডি অফ লাইজ, শাটার আইল্যান্ড, ইনসেপশন, জ্যায়াঙ্গো আনচেইন্ড, দ্য গ্রেট গ্যাটসবি, দ্য উলফ অফ ওয়াল স্ট্রিট, দ্য রেভনেন্ট, ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন হলিউড… এর মতো সিনেমাগুলো উপহার দিতে হবে নিয়মিত বিরতিতে। লিওনার্দো ডি’ক্যাপ্রিও ঠিক এ কাজটাই করেছেন বেশ সফলতার সাথে।
জীবনের ৪৬তম বসন্তে এসে এই অভিনেতা অভিনয় করেছেন ৫৮টি টাইটেলে, প্রযোজনা করেছেন ৪১টি টাইটেলে, লিখেছেন ২টি টাইটেলে। অস্কারে নমিনেশন পেয়েছেন ৭ বার, জিতেছেন একবার। বাফটায় নমিনেশন পেয়েছেন ৫ বার, গোল্ডেন গ্লোবে নমিনেশন পেয়েছেন ১৩ বার, জিতেছেন ৩ বার। স্ক্রিন গিল্ড অ্যাক্টর্স গিল্ড অ্যাওয়ার্ডসে এক জয়ে নমিনেশন হাকিয়েছেন ১১ বার। ক্যারিয়ারে সর্বমোট ২৪৮ নমিনেশনে পুরস্কার জিতেছেন ৯৯ বার। অভিনয় ছাড়া পরিবাশবাদ নিয়ে তাকে বেশ সরব দেখা যায় সবসময়। বাকি অভিনেতাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল জুড়ে যেখানে গ্ল্যামার ছড়িয়ে থাকে, সেখানে তার কাজ শুধু পরিবেশ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা। তার অস্কার জয়ের স্পিচেও যেটা প্রকটভাবে লক্ষ্য করা গেছে। এতো সুন্দর উইনিং স্পিচ দিয়েছিলেন যে মনে হচ্ছিলো তার সেই ভাষণটাও একটা সোলো অস্কার ডিজার্ভ করে।
অস্কার থেকে নিয়ে শুরু করে জাতিসংঘ, পরিবেশবাদ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন সবখানেই। বানিয়েছেন ডকুমেন্টারি। ক্যাপ্রিও তার দর্শকদের সাথে নিজেকেও আপডেট করেছেন প্রতিনিয়ত, দর্শকদের ম্যাচিউরিটির সাথে চমৎকারভাবে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এই ব্যালেন্সড্ আচরণের জন্যই ব্যক্তিগতভাবে তাকে এতোটা পছন্দ করি। এ পথচলায় নতুন ভক্তকূলের ভালোবাসা যেমন গ্রহণ করেছেন, সমালোচকদের প্রশংসাও পেয়েছেন। বলতে গেলে ক্যারিয়ারের মধ্যগগণেই আছে। যে বয়সে গিয়ে টিপিকালি হলিউডের অভিনেতারা বিকশিত হতে শুরু করে, সে বয়সে তিনি যে ফিল্মোগ্রাফীর মেইনটেইন করেছেন, সেখানে চোখটা বুলিয়ে নিলেই উত্তরটা পাওয়া যায় খুব সহজেই। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে কমপক্ষে আগামী এক যুগ চুটিয়ে কাজ করতে পারবেন তিনি।
সূত্রঃ নতুনবার্তা