গুচ্ছ কমিটির সিদ্ধান্ত শিক্ষাবান্ধব নয়; বরং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তঃ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী
দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের সার্বিক ভোগান্তি হ্রাসে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা জানায় আয়োজক কমিটি।
তবে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট শুরুতেই বাদ দেয়া, পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা, কর্মদিবসে পরীক্ষার তারিখ ফেলায় তীব্র যানজট, নিজের পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে না পারা এবং সর্বশেষ মানবিক ও বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার ফলাফলে তীব্র অসঙ্গতিতে সাধের গুচ্ছই সীমাহীন ভোগান্তির কারণ হয় হাজারো ভর্তি ইচ্ছুকের জন্য।
ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা দূর করতে সমাধান হিসেবে ফল চ্যালেঞ্জের সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ নভেম্বর ফল চ্যালেঞ্জের আবেদনের সময়সীমা (৭-১১ নভেম্বর) ও ফি নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে আবেদন ফি দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয়েছে কোনো শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হলে তার সমুদয় টাকা ফেরত দেয়া হবে। ফল চ্যালেঞ্জের জন্য দুই হাজার টাকা ফি’র সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি এটি কোনো শিক্ষাবান্ধব সিদ্ধান্ত নয়; বরং বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত।
অপর দিকে পরীক্ষার পরে গুচ্ছভুক্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পছন্দের বিষয়ের জন্য আলাদাভাবে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। গত ৩ নভেম্বর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তির জন্য পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় সেখানে প্রতি অনুষদের আওতাধীন বিষয়গুলোতে আবেদনের জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫০ টাকা, যার ফলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের বিষয়গুলোতে আবেদনের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর গুনতে হবে ২৬০০ টাকা। আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এতে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এই বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করেছেন বলেও জানা যায়।
এরপর গত ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতি বিভাগে আবেদন করতে শিক্ষার্থীদের দিতে হবে ৬০০ টাকা। আবেদন করা যাবে আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই যদি এত টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয় তাহলে গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে গুনতে হবে ১৫-১৬ হাজার টাকা। এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব নয়; বরং তা কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত। শুরুতে ভোগান্তি পোহানোর পর এখন আর্থিকভাবেও শিক্ষার্থীদের চাপে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে অনেকেরই আর আবেদন করা হয়ে উঠবে না পছন্দের জায়গায়। আশার আলো নিভে যাবে এখানেই।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরর অভিযোগ- প্রথমে কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত আবেদনের ফি নির্ধারণ করেছিল ৬০০ টাকা; কিন্তু সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট ভিসিদের বৈঠকে সেটি ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের সার্বিক সুবিধার জন্যই গুচ্ছ পদ্ধতি আয়োজনের কথা বলা হয়েছিল। এখন প্রতিটি ধাপেই তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ভর্তি পরীক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের ভুগিয়ে যাচ্ছে গুচ্ছ কমিটি। ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন ফি কিভাবে ২০০০ টাকা হয়! আবার এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেখানেও বেশি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত; এসব সিদ্ধান্তে অনেকের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। অথচ এই গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিই আমাদের মতো অনেক শিক্ষার্থীর আশার অবলম্বন ছিল।
এ বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল তিনটি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও ফি-সহ যাবতীয় বিষয় নির্ধারণ করবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব নিয়ম ও আইন অনুযায়ী অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে ভর্তি ফি নির্ধারণ করছে। তাই ফি কমানো বা এ-সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ গুচ্ছ কমিটির নেই।
তিনি আরো বলেন, ফল চ্যালেঞ্জ করে কোনো শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হলে তার সমুদয় টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আবেদন ফি দুই হাজার টাকাই দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।