শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য ২১টি বিমা কম্পানিকে বিএসইসির চিঠি
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) দেশের শেয়ার বাজারে ২১ বীমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) অনুরোধ করেছে। এ তথ্য জানা যায় বিএসইসি সূত্রে।
বুধবার (১৬ মে) বিএসইসি এ বিষয়ে আইডিআরএ’র কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, ” আইডিআরএকে এই মর্মে অনুরোধ করা হয়েছে যে, কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ অবস্থা এবং আইপিওতে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ যেন নেয়া হয়। বিমা কোম্পানিগুলোর জন্য আইন শিথিল করা হয়েছে। এর পরও এযাবৎ ২১টি কোম্পানি আইপিওর জন্য আবেদন করেনি।
গেলবছর ২২ নভেম্বর, ২০২০ সালে নির্দিষ্ট মূল্য পদ্ধতির আওতায় প্রাথমিক পাবলিক অফার বা আইপিও’তে আবেদনপত্র দাখিলের জন্য ২৬ টি কোম্পানিকে পাবলিক ইস্যু বিধি, ২০১৫ এর কিছু বিধান মেনে চলার ছাড় দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিলো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’ থেকে।
এসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে দুটি ইতিমধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এবং আরও তিনটি কোম্পানি আইপিও’র জন্য বিএসইসি’র কাছে আবেদন করেছে।
বিমা আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে না পারলে যথপোযুক্ত কারণ দেখিয়ে দুই বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে নিতে পারে। তারপরেও তালিকাভুক্ত না হলে, দৈনিক জরিমানা দিতে হয়। ২০১০ সাল পর্যন্ত জরিমানার পরিমাণ ছিল দৈনিক এক হাজার টাকা। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে দৈনিক ৫ হাজার টাকা করা হয়।
বিমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে না পারার কারণে অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে অর্থমন্ত্রী ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৭ বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন। মন্ত্রীর নির্দেশনার পর নতুন করে ইস্যু হিসেবে দাঁড়ায় পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫। আইডিআরএ জানায়, “এই আইন শিথিল না হলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কঠিন”। পরে আইন শিথিল করার জন্য বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ বিএসইসিতে চিঠি লিখেন। অতঃপর আইন শিথিল করা হয়।
আইন শিথিল: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিমা কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে ৭৪১তম সভায় পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ বিমা কোম্পানির জন্য শিথিল করে। অভিহিত মূল্যে কোন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে হলে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা তুলতে হবে বলে আইন ছিলো। কিন্তু সেই সক্ষমতা বিমা কোম্পানিগুলোর নেই। টাকা নিয়ে বিনিয়োগের কোন জায়গা নেই তাদের। বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির দারস্থ হয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বিমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে এই শর্তটি শিথিল করেছে বিএসইসি। ওই সময় বিএসইসি থেকে বলা হয়, বর্তমানে ২৬টি কোম্পানি অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে আসতে চায়। এই কোম্পানিগুলোর সর্বনিম্ম ১৫ কোটি টাকা তুললেই বাজারে আসতে পারবে।
এদিকে অর্থমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার আগেই দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, এবং সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য প্রথমিক আবেদন করে। এর মধ্যে সোনালী লাইফ বাদে বাকী তিনটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। আর সোনালী লাইফের আইপিও আবেদন শেষ হয়েছে।
সাধারন বিমা কর্পোরেশন ও রাষ্ট্রায়ত্ব জীবন বিমা কর্পোরেশন এবং দুটি বিদেশি কোম্পানিসহ দেশে মোট ৭৮টি বিমা কোম্পানি রয়েছে দেশে। এর মধ্যে ৩২টি জীবন বিমা, ৪৬টি সাধারণ বিমা এবং দুটি বিদেশি বিমা কোম্পানি। বিদেশি বিমা কোম্পানি দু’টি হলো আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মেটলাইফ এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন অব বাংলাদেশ।
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৫০টি বিমা কোম্পানি। এর মধ্যে ৩৮টি সাধারণ বিমা ও ১২টি জীবন বিমা কোম্পানি। অন্যদিকে ২১টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির বিষয়ে জানতে চেয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে ১৭টি জীবন বিমা ও ৪টি সাধারণ বিমা কোম্পানি।
পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবন বীমা কোম্পানি হোমল্যান্ড লাইফ,গোল্ডেন লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, আলফা ইসলামি লাইফ, বায়রা লাইফ, বেস্ট লাইফ,এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, প্রোটেকটিভ ইসলামি লাইফ,জেনিথ ইসলামি লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, যমুনা লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ, এলআইসি বাংলাদেশ।
সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো হলো: মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ও সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।