করোনাভাইরাসশিক্ষাঙ্গন

সরকারি নির্দেশনা মেনেই কওমি মাদরাসা খোলার পরিকল্পনা চলছে

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক বিপর্যয়ের শিকার শুধু কওমি মাদরাসা নয়, বরং দেশের সব ধারার সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এর দ্বারা প্রভাবিত। সবারই শিক্ষা কার্যক্রম কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। জাতীয় এই সংকটের ব্যাপারে দেশের শীর্ষ আলেমরা সজাগ ও সচেতন আছেন।

অন্যদিকে কওমি মাদরাসার নতুন শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম কিভাবে শুরু করা যায় তা নিয়েও তাঁরা চিন্তিত। রমজানের শেষ ভাগে ও রমজানের পর সংক্ষিপ্ত পরিসরের বৈঠক ও পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে শীর্ষ আলেমরা একটি মৌলিক ব্যাপারে একমত হয়েছেন, তা হলো—সরকারের পরামর্শ ও নির্দেশনা ছাড়া মাদরাসা খোলার সাধারণ ঘোষণা দেওয়া সমীচীন হবে না।

প্রত্যেক সেক্টরে কর্মরত ব্যক্তিরাই সেই সেক্টরের ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা সবচেয়ে ভালো উপলব্ধি করতে পারে। সেই হিসেবে মাদরাসাগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি সরকারের সামনে তুলে ধরার সিদ্ধান্তও শীর্ষ আলেমরা নিয়েছেন। যেন সরকারের পরামর্শ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দ্রুততম সময়ে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়।

ঈদের ছুটি শেষে প্রশাসনিক কার্যক্রম গতিশীল হলেই সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে দায়িত্বশীল আলেমদের একটি বৈঠক ও মতবিনিময় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে দায়িত্বশীল আলেমরা কাজ করছেন। ঈদের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে ৩০ মের পরে সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার ইঙ্গিতও আছে। সব মিলিয়ে আশা করা যায়, মাদরাসা খোলার ব্যাপারে দ্রুততম সময়ে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে।

দেশের কওমি মাদরাসাগুলো সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খলভাবে পারিচালিত হয় এবং বেশির ভাগ মাদরাসা আবাসিক। তাই আমরা সরকার ও প্রশাসনকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই—কওমি মাদরাসাগুলোর জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা তুলনামূলক সহজ।

সরকারের মতামত সাপেক্ষে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা গেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা কী হবে—তা নির্ধারণে খুব শিগগিরই হাইতুল উলয়া ও বেফাকের দায়িত্বশীলদের বৈঠক হওয়ার পরিকল্পনা আছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। ইনশাআল্লাহ!

এমনও চিন্তা করা হচ্ছে, মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করার আগে স্থগিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেওয়া এবং এসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাদরাসায় এসে পড়ালেখার সুযোগ দেওয়া। যেন মাদরাসাগুলো স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার ব্যাপারে নিজেদের সামর্থ্যের বিষয়টি মূল্যায়ন করতে পারে।

পাশাপাশি পরীক্ষা শেষ হতে হতে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মাদরাসার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়। এমন অনেক বিকল্প ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কথা চিন্তা দায়িত্বশীলদের মাথায় রয়েছে। তবে এর কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত নয়। সংশ্লিষ্ট বৈঠকে পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অনেকেই মনে করছেন করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে কখনোই নির্মূল হবে না। পরিবর্তিত একটি ব্যবস্থার দিকেই বিশ্ববাসীকে যেতে হবে। তাই সচেতনতা ও সতর্কতার সঙ্গে জীবনযাত্রা কিভাবে স্বাভাবিক করা যায় সেই চিন্তা পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রই করছে।

এটি অসম্ভব নয় যে, এই পরিস্থিতির ভেতরেই হয়তো মাদরাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। সুতরাং প্রতিটি মাদরাসারই উচিত নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া। সেটা এভাবে যে—শিক্ষকরা মাদরাসায় উপস্থিত হলেন এবং মোবাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভর্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেন, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিলেন, অভিভাবকদের সচেতন করলেন যেন তাঁরাও সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি যত্নশীল হন।

দায়িত্বশীলদের সব দোয়া, প্রচেষ্টা ও আশাবাদের পরও নতুন বর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত এবং তা যে কিছুটা হলেও বিলম্বিত হবে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। তাই শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্দেশনা থাকবে তারা যেন অবসর সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার করে, দিন-রাতের একটি অংশ পড়ালেখায় ব্যয় করে, অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিরতির কারণে যেন তারা পড়ালেখা ও বই-পুস্তকের সঙ্গে একেবারেই সম্পর্কহীন হয়ে না যায়। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজেদের গুনাহ থেকে তাওবা করা এবং সিজদাবনত হয়ে দেশ, দেশের মানুষ ও পৃথিবীর মানুষের জন্য দোয়া করা। যেন আল্লাহ আমাদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − 11 =

Back to top button