‘সাহেদ রীতিমতো গানম্যানসহ পুলিশ প্রটেকশন পেত’
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, “সেই (সাহেদ) লোকটা যে আওয়ামী লীগের একজন মদদপুষ্ট লোক, আওয়ামী লীগের উচ্ছিষ্ট লোক। আর সে রীতিমতো গানম্যানসহ পুলিশ প্রটেকশন পেত। সরকার তাকে তৈরি করেছে। এ রকম একটা দুইটা না। আপনার এন-৯৫ ফাইভ মাস্ক কেলেঙ্কারি যারা করেছে তারাও।
তিনি বলেন, ‘মানুষের যখন মৃত্যুর আহজারি, ক্ষুধার্তের আর্তনাদ সেই সময়ে মানবতার সঙ্গে এত বড় বেঈমানি করার দল পৃথিবীতে বেশি নাই। মহামারীর মধ্যে যখন চারপাশে দুর্গতের দীর্ঘশ্বাস বাতাসকে ভারী করছে- সেই সময়ে চিকিৎসার নামে প্রতারণাকারী পৃথিবীতে খুব বেশি নেই।’
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের উদ্যোগে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন: করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের আবারো সংবিধানবিরোধী পদক্ষেপ’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। আলোচকরা নিজ নিজ বাসা থেকে এতে যুক্ত হন।
মান্না বলেন, ‘আপনি এখান থেকে অনুমোদন দিয়েছেন হসপিটাল চালানোর জন্য, তাকে টেস্ট করতে দিয়েছে এই করোনাভাইরাসের এবং তার সনদ দেওয়া লোকজন বাইরে গেছে, গিয়ে ধরা খেয়েছেন…। সারা দুনিয়াতে বদনাম হয়েছে।’
আলোচনায় যুক্ত হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা হাসপাতাল কী করে একটা মিথ্যা সার্টিফিকেট দিতে পারে? কালকে আমি দেখলাম একাত্তর টেলিভিশনে আমাদের সমস্ত মন্ত্রীরা তার (রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মো. সাহেদ) সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, কাজ করছেন। অর্থাৎ পুরোপুরি সরকারের মদদ নিয়ে এই অপকর্মটা তারা করেছে।”
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের যে পারফরমেন্স এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা সবাই দেখছি, ভোগ করছি প্রতি মুহূর্তে। সকালে উঠে শুনতে হয় মৃত্যুর খবর, আবার রাতে শোয়ার আগেও শুনতে হয় মৃত্যুর খবর। এভাবে মহামারীতে মৃত্যু হবে, কিন্তু তা কোনো রকমের প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না এবং চরম উদাসীনতার মধ্য দিয়ে, অবহেলার মধ্য দিয়ে সরকার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে- এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য, জনগণের অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য তাদের আজকে একটা জায়গায় আসতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শুদ্ধ করে আনার জন্যে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার এবং এই সরকারকে চলে যেতে হবে-এই দাবি তুলতে হবে।
বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের সংশোধনের উদ্যোগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘তাদের একটাই উদ্দেশ্য- আওয়ামী লীগকে বারবার ক্ষমতায় নিয়ে আসা, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখা। নির্বাচন কমিশন তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে, তারা তাদের প্রভুদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সমস্ত আইন তৈরি করছে।’
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা এবং তাদেরকে ক্ষমতায় রাখার প্রক্রিয়াটি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার থেকে শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে এক-এগারো থেকে। বিরাজনীতিকরণের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে- রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোকে একেবারে অকার্যকর করে। এখনও পরিকল্পিতভাবে সচেতনভাবে সেই কাজ চলছে। লক্ষ্য করে দেখবেন যে, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন একইভাবে নির্বাচন কমিশনগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করেছে সেই দায়িত্বটা ছিল যে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা।’