স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

সুস্বাস্থ্য নিয়ে বার্ধক্যের পথে এগোতে দরকার আঁশযুক্ত খাবার

শরীর ঠিক রাখতে বয়সের পরিক্রমায় পুষ্টি চাহিদা কীভাবে বদলায় সেদিকে নজর রাখা দরকার। সব বয়সেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা আবশ্যক। তবে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে যা বয়স যত বাড়ে ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এমন পুষ্টি উপাদানের তালিকায় প্রোটিন হল প্রধান।

তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ভোজ্য আঁশ। ১৭ হোক কিংবা ৭০ সব বয়সেই ভোজ্য আঁশ জরুরি, তবে ৭০’য়ে অনেক বেশি জরুরি।

হজমতন্ত্রের ওপর বয়সের প্রভাব

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরিন সব অংশই তার জৌলুস হারায়।
নিউ ইয়র্কের স্বনদ স্বীকৃত পুষ্টিবিদ সামান্থা ক্যাসেটি বলেন, “বয়স যত বাড়ে, হজমতন্ত্রের পেশিগুলো ততই দুর্বল হতে থাকে। এর কারণে পুরো হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতি হারায় এবং দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য।”

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আবার এসময় ওষুধ সেবনের বিষয়টা নিয়মিত হয়ে দাঁড়ায়। আর অনেক ওষুধই হজমতন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, দেখা দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা বুক জ্বালাপোড়া।”

হজমতন্ত্রে ভোজ্য আঁশের উপকারিতা

অস্ট্রেলিয়ার ‘দি ওয়েস্টমিড ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল রিসার্চ’ ৪৯’য়ের বেশি বয়সি ১,৬০০ জনের ওপর এক পর্যবেক্ষণ চালায়।

২০১৬ সালে করা এই গবেষণায় জানা যায়, যারা ভোজ্য আঁশ গ্রহণ করেন পর্যাপ্ত, তাদের দীর্ঘায়ু পাওয়া সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, ‘টাইপ টু ডায়বেটিস’, ‘ডিমেনশিয়া’, হতাশাগ্রস্ততা, নড়াচড়ার অক্ষমতা ইত্যাদির ঝুঁকি অনেকাংশে কমায় ভোজ্য আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস।

কেন এমনটা হয়?

ক্যাসেটি বলেন, “ভোজ্য আঁশ হল একধরনের উদ্ভিজ্জ ‘কার্বোহাইড্রেইট’ যা সহজে হজম হয় না। ফল, সবজি, শষ্যজাতীয় খাবার, বাদাম, বীজ ইত্যাদিতে পাওয়া যায় এই ভোজ্য আঁশ। আর এই উপাদান তৈরি করে নরম মল যা সহজে হজমতন্ত্রের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে।”

“অন্ত্রের ‘মাইক্রোবায়োম’কে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও যোগায় আঁশ। যার কল্যাণে অজস্র ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সমষ্টি ‘মাইক্রোবায়োম’ বজায় থাকে। এই ‘মাইক্রোবায়োম’ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে নিবিঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত, অর্থাৎ এই ‘মাইক্রোবায়োম’য়ের সুস্বাস্থ্যই নিশ্চিত করতে শরীরের সার্বিক সুস্থতা।”

তিনি আরও বলেন, “একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২১ থেকে ৩৮ গ্রাম ভোজ্য আঁশ প্রয়োজন। তবে সিংহভাগ মানুষ গড় হিসেবে দিনে ১৫ গ্রামেরও কম গ্রহণ করেন এই উপাদান।”

ভোজ্য আঁশের উৎস

ক্যাসেটি বলেন, “পরিপূর্ণ শষ্যজাতীয় এবং উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আসা খাবার গ্রহণ করা হওয়া উচিত প্রতিটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের প্রধান লক্ষ্য। প্রতিবেলার খাবারের অর্ধেকটা হওয়া উচিত সবজি কিংবা ফল অথবা তার মিশ্রণ। পাতের তিনভাগের একভাগ হওয়া উচিত স্নেহজাতীয় খাবার কিংবা পরিপূর্ণ শষ্য। খাবারের বাকি অংশ হওয়া উচিত প্রোটিন।”

তিনি আরও বলেন, “কিছু খাবারে ভোজ্য আঁশ থাকে প্রচুর পরিমাণে। তাই যে খাবারে এই উপাদানের মাত্রা কম, সেগুলোকে অবহেলা করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ এই খাবারগুলো তাদের ভোজ্য আঁশের মাত্রার তুলনায় বেশি মাত্রায় হজমে সহায়তা করে। যেমন কাঠবাদামে আঁশ কম হলেও থাকে ‘পরিফেনল’ আর ‘এলাজিক অ্যাসিড’, দুটোই অন্ত্রের ‘মাইক্রোবায়োম’য়ের ওপর উপকারী প্রভাব ফেলে। সীমজাতীয় খাবারে প্রচুর ভোজ্য আঁশ মেলে।”

সবার পরিচিত কিছু খাবারে থাকা ভোজ্য আঁশের মাত্রা সম্পর্কে জানান এই পুষ্টিবিদ।

আধা কাপ মসুর ডালে থাকে প্রায় সাড়ে ছয় গ্রাম আঁশ। মাঝারি আকারের একটি আপেল যোগায় প্রায় পাঁচ গ্রাম। আধা কাপ শুকনা ওটস থেকে পেতে পারেন চার গ্রাম ভোজ্য আঁশ। এক ব্রকলিতে থাকে দুই গ্রাম আঁশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + one =

Back to top button