সেই অভিনন্দনকে সর্বোচ্চ পুরস্কার, পাকিস্তানিদের খোঁচা!
ভারতের আলোচিত পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে দেশের যুদ্ধকালীন সামরিক বীরত্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘বীর চক্র’ সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সোমবার তাকে এ সম্মানে ভূষিত করেন।
২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান গুলি করে অবতরণ করানোর স্বীকৃতিস্বরূপ তৎকালীন উইং কমান্ডার, বর্তমানে ক্যাপ্টেন, অভিনন্দন বর্তমানকে এ সম্মাননা দেয়া হয়। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সম্পূর্ণ নকল বীরত্বের জন্য বীরচক্র দেয়া হয়েছে অভিনন্দনকে।
ভারতীয় সূত্রগুলোর দাবি, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলায় জম্মু থেকে শ্রীনগরের যাওয়ার পথে সেনাদের কনভয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’। ওই বিস্ফোরণে মারা যায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান। এ ঘটনার ১২ দিনের মাথায় আকাশপথে পাকিস্তানের বালাকোটে ঢুকে ওই ‘সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি’তে পাল্টা হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। ধ্বংস করে দেয় বেশ কয়েকটি ঘাঁটি। এরপর আকাশপথে ভারতে ঢুকে পাল্টা হামলার চেষ্টা চালায় পাকিস্তানি যুদ্ধ বিমান এফ-১৬।
সে সময় ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন মিগ-২১ নিয়ে পাক যুদ্ধবিমানটিকে ধাওয়া করে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েন এবং গুলি করে নামান পাকিস্তানি এফ-১৬ বিমানটিকে। এই ঘটনার পরপরই পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরে ঢুকে পড়ায় উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে বন্দি করে সে দেশের প্রশাসন। তবে অভিনন্দনের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয় ভারতসহ গোটা বিশ্ব। পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেয় জাতিসংঘও। অবশেষে কূটনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। মুক্তি দেওয়া হয় অভিনন্দন বর্তমানকে।
এদিকে, পাকিস্তানিরা অভিনন্দনকে বীর চক্র দেয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলছেন। তারা বলছেন, নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে সম্পূর্ণ নকল বীরত্বের জন্য বীরচক্র দেয়া হয়েছে অভিনন্দনকে। কারণ অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানের যে বিমান বিধ্বস্ত করার জন্য এ সম্মাননা পেয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, আসলে তেমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যেদিন পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান বিধ্বস্তের দাবি করা হয়েছিল, তার পরই ইসলামাবাদ এ বিমানের সরবরাহকারী সংস্থাকে ডেকে এনে প্রমাণ করে দেয়, তাদের কাছে যতগুলো এফ-১৬ থাকার কথা, ততগুলোই আছে। কোনোটি ক্ষতিগ্রস্ত বা নিখোঁজ নেই। কয়েকদিন পর বিখ্যাত ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনও এ বিষয়ে এক্সক্লুসিভ রিপোর্টে এর সত্যতা জানায়।
পাকিস্তানের সূত্রগুলোর দাবি, দুই বছর আগে পাকিস্তান সীমান্তের ভিতর চলে আসা ভারতের একটি মিগ-২১ বাইসন বিমান পাকিস্তান বিমানবাহিনী গুলি করে ভূপাতিত করে এবং এর পাইলটকেও গণপিটুনির পর বন্দি করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সীমান্তে শান্তির ইঙ্গিত হিসেবে তাকে ভারতের কাছে বিনাশর্তে হস্তান্তর করেন। তাই ভারতের এ পুরস্কারের ঘোষণায় পাকিস্তানে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তোলপাড়।
সানা জামাল নামের এক পাকিস্তানি টুইটার ব্যবহারকারী বলেন, ভারতই সম্ভবত একমাত্র দেশ যেটি সর্বনাশা ব্যর্থতা, জাতীয় অপমান এবং ঘৃণামূলক অপরাধের পুরস্কার দেয়। তা না হলে একজন পাইলট যে পাকিস্তানের হাতে বন্দি ছিল, তার বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল, এমনকি স্বয়ং যে গণপিটুনির শিকার হয়েছিল, সে কেন এ রকম একটি পুরস্কার পাবে?
টুইটে আসাদ সুলতান বলেন, অভিনন্দন যে তার মিশনে ব্যর্থ হয়েছিল, ধরা পড়েছিল এবং পাকিস্তান তাকে ফেরত পাঠিয়েছিল। অথচ তাকেই ভারত সরকার পুরস্কৃত করে বলেছে, তু হামারা হিরো হ্যায় বা তুমি আমাদের নায়ক।