Breakingদেশবাংলা

স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যে ঘর ছেড়েছিলেন, ফিরলেন ৪৮ বছর পর

সালটা ১৯৭৩ অথবা ১৯৭৪। আমজদ আলীর (৯৫) তখন বিয়ের মাত্র দুই বছর। স্ত্রী হাজেরা খাতুনের কোলে তখন ছয় মাসের সন্তান কালা মিয়া। সেই সময় স্ত্রীর সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। তারপর কেটে গেছে ৪৮ বছর। চার যুগ পর নিজের জন্মভিটা ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ফিরে আমজদ আলী কাউকে পাননি। পরে একই এলাকায় এক স্বজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, সন্তান পরিবার নিয়ে থাকেন সিলেটে।

নিজের হারিয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পাওয়ার কথা এভাবেই বলছিলেন কালা মিয়া (৫০)। সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকা স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রায় ৩৫ বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি। ৪৮ বছর পর নিজের বাবাকে খুঁজে পেয়ে আপ্লুত কালা মিয়া।

কালা মিয়া বলেন, যখন তিনি মায়ের কোলে ছিলেন, তখন বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আট বছর বয়সে তিনি মাকেও হারিয়ে ফেলেন। মা–বাবাকে ছাড়াই তিনি বড় হন। কিশোর বয়সে জীবিকার তাগিদে সিলেটে যান। এরপর সেখানে নিজের সংসার গড়েছেন। কিন্তু মনে মনে মা-বাবাকে খুঁজে ফিরেছেন সব সময়।

৯ জানুয়ারি নানার বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সিলেট থেকে নেত্রকোনায় ছুটে যান কালা মিয়া। সেখানে ৪৮ বছর আগে হারানো বাবাকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাবা আমজদ আলীও কান্না করছিলেন। স্ত্রী হাজেরা খাতুনকে খুঁজছিলেন তিনি। স্ত্রীর হারিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে তিনি মর্মাহত হন।

আমজদ আলী বর্তমানে ভারতের বাসিন্দা। সেখানে তাঁর স্ত্রী-সন্তান আছে। ৮ জানুয়ারি তিনি সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ৪৮ বছর আগে রেখে যাওয়া স্ত্রী-সন্তানের খোঁজে বাংলাদেশে আসেন। তখন তিনি জানতেন না, ছেলে সিলেটে থাকেন। স্ত্রী-ছেলের খোঁজে ময়মনসিংহ গিয়ে কাউকে পাননি। পরে নেত্রকোনার বারাড্ডায় গিয়ে সন্তানের খবর পান। মুঠোফোনে যোগাযোগের পর ছেলে গিয়ে তাঁকে সিলেটে নিয়ে আসেন।

কালা মিয়া বলেন, ‘বড় হওয়ার পর শুনেছি, মায়ের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে বাবা ভারতে চলে যান। তখন আমার বয়স ছিল ছয় মাস। বয়স যখন আট হবে, তখন কুষ্টিয়ায় যাওয়ার পথে মা দুর্বৃত্তের হাতে অপহৃত হন। ১০ বছর পর পাকিস্তানের করাচি থেকে আমার মা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তখন চিঠিটি নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, তিনি পাকিস্তানে আছেন। এরপর আর মায়ের খোঁজ পাইনি। ৪৮ বছর পর বাবাকে ফিরে পেয়ে মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে। জানি না, মা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন। মা বেঁচে থাকলে একবার হলেও দেখতে চাই। এটাই এখন শেষ চাওয়া।’

আমজদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় ছয় মাসের ছেলেকে রেখে গিয়েছিলাম। ভারতে যাওয়ার পর স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। সম্প্রতি ছেলেকে দেখার জন্য মনটা উতলা হচ্ছিল। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করা পরিচিতজনের মাধ্যমে পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়েও পাচ্ছিলাম না। তখন নিজেই বাংলাদেশে চলে আসি।’ ছেলের সঙ্গে নাতি-নাতনিদের পেয়ে তিনি খুবই খুশি।

আমজদ আলীর নাতি সুজন মিয়া (৩০) বলেন, দীর্ঘদিন পর দাদাকে ফিরে পেয়েছেন বাবা। তাঁকে ‘বাবা’ বলে ডাকতে পারছেন। বাবার মুখে আগে শুনেছেন, দাদা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তিনিও (সুজন) বড় হওয়ার পর কাউকে ‘দাদা’ বলে ডাকতে পারেননি। এখন দাদার আদর পেয়ে তিনি খুবই খুশি। তিনি বলেন, ‘এখন দাদির জন্য অপেক্ষা করছি। আশা আছে, তিনি ফিরলে পরিবার পূর্ণ হবে। দাদাকে যেভাবে ফিরে পেয়েছি, ঠিক সেভাবে দাদিকে ফিরে পেতে চাই।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =

Back to top button