নিজের প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত করোনা কিটের পরীক্ষায় তিনি এখন করোনামুক্ত। নিজের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে সরাসরি জানাজায় অংশ নিলেন তিনি। যখন মা সন্তানকে, সন্তান মাকে ফেলে চলে যাচ্ছে, তখন এটা ভাবা যায়? এই করোনার ক্রান্তিকালে বিশ্বসংসারে অদ্ভুত, অভিনব, অশ্রুতপূর্ব—সব কাহিনির জন্ম নিচ্ছে। এই সময়ে আমরা পেলাম এক নতুন ‘করোনা হিরো’। তিনি ৭৯ বছর বয়স্ক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। একজন নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যকর্মী, একজন নায়ক হিসেবে তাঁর খ্যাতি বিশ্বময়, বহুকাল আগে থেকেই।
করোনাকালে তিনি ক্রমশ হয়ে উঠলেন স্বাস্থ্য নায়ক থেকে ‘করোনা–হিরো’। শনিবার রাতে তিনি এই প্রতিবেদককে ফোন করে তাঁর স্বপ্নের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের বিলম্বে আক্ষেপ করেন। ক্ষীণস্বরে বলেন, ‘হোয়াট আ শেম।’ পরদিন সকালেই তিনি রীতিমতো হাসপাতাল থেকে পালান। ছুটে যান বনানীতে, তাঁর স্নেহভাজন মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায়।
বনানীতে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের হতাশ হতে হয়, কারণ তাঁর পক্ষে কথা বলা সম্ভব ছিল না। তিনি করোনামুক্ত। নিউমোনিয়ামুক্ত নন। তবে ঝুঁকিমুক্ত নন। রোববার সকাল ১০টার দিকে বেরিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বাইরে থেকে তাঁর আগের কেবিনেই ফেরেন। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত ২২ দিন নিজের হাসপাতালেই কাটান। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ দিনই অক্সিজেন নেন। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪ থেকে ৬ লিটার। চিকিৎসকদের মতে এটা নরমাল। কখনো জ্ঞান হারাননি। কখনো নিজের চিকিৎসায় নিজেই হাত লাগিয়েছেন।
নিজের প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত করোনা কিটের পরীক্ষায় তিনি এখন করোনামুক্ত। নিজের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে সরাসরি জানাজায় অংশ নিলেন তিনি। যখন মা সন্তানকে, সন্তান মাকে ফেলে চলে যাচ্ছে, তখন এটা ভাবা যায়? এই করোনার ক্রান্তিকালে বিশ্বসংসারে অদ্ভুত, অভিনব, অশ্রুতপূর্ব—সব কাহিনির জন্ম নিচ্ছে। এই সময়ে আমরা পেলাম এক নতুন ‘করোনা হিরো’। তিনি ৭৯ বছর বয়স্ক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। একজন নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যকর্মী, একজন নায়ক হিসেবে তাঁর খ্যাতি বিশ্বময়, বহুকাল আগে থেকেই।
করোনাকালে তিনি ক্রমশ হয়ে উঠলেন স্বাস্থ্য নায়ক থেকে ‘করোনা–হিরো’। শনিবার রাতে তিনি এই প্রতিবেদককে ফোন করে তাঁর স্বপ্নের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের বিলম্বে আক্ষেপ করেন। ক্ষীণস্বরে বলেন, ‘হোয়াট আ শেম।’ পরদিন সকালেই তিনি রীতিমতো হাসপাতাল থেকে পালান। ছুটে যান বনানীতে, তাঁর স্নেহভাজন মোহাম্মদ নাসিমের জানাজায়।
৭৯ বছর বয়স্ক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন নিবেদিতপ্রাণ স্বাস্থ্যকর্মী। নিজের প্রতিষ্ঠানের করোনার কিটের পরীক্ষায় তিনি করোনামুক্ত।
বনানীতে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের হতাশ হতে হয়, কারণ তাঁর পক্ষে কথা বলা সম্ভব ছিল না। তিনি করোনামুক্ত। নিউমোনিয়ামুক্ত নন। তবে ঝুঁকিমুক্ত নন। রোববার সকাল ১০টার দিকে বেরিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বাইরে থেকে তাঁর আগের কেবিনেই ফেরেন। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত ২২ দিন নিজের হাসপাতালেই কাটান। এর মধ্যে ১০ থেকে ১২ দিনই অক্সিজেন নেন। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪ থেকে ৬ লিটার। চিকিৎসকদের মতে এটা নরমাল। কখনো জ্ঞান হারাননি। কখনো নিজের চিকিৎসায় নিজেই হাত লাগিয়েছেন।
এরই মধ্যে তিনি মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসার খবরও নিয়মিত পেতেন। তাঁর কয়েক দশকের সহকর্মী ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার। জনাব নাসিমের সঙ্গে চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতার কিছু ঘটনার সাক্ষী তিনি। বললেন, মোহাম্মদ নাসিমের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারল (অব.) মামুন মোস্তাফি। তিনি গণস্বাস্থ্যের নগর হাসপাতালের নেফ্রলজি বিভাগের প্রধান। জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দেখতে এলে তাঁর কাছ থেকে কুশল জেনে নিতেন। শনিবার এই প্রতিবেদককে ফোন করার আগে তিনি মুহিব উল্লাহকে বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের কাছে তিনি নানাভাবে ঋণী। তাঁর মৃত্যুতে তিনি অত্যন্ত শোকাহত।
বনানীতে তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই অভিবাদন জানান। কফিনের সামনে গিয়ে সামরিক কেতায় হাত তুলে স্যালুট করেন। এরপর তিনি ১৫ আগস্টের কালরাতের শহীদদের মধ্যে যাঁরা বনানীতে শায়িত তাঁদের কবরে নীরবতা পালন করেন। এরপর জাতীয় চার নেতার মাজার জিয়ারত করেন।
পুরোনো পারিবারিক সম্পর্ক
গত রাতে মোহাম্মদ নাসিম পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূচনা কবে—জানতে চাইলে সরাসরি কথা বলতে পারেননি তিনি। ডা. মুহিব উল্লাহর মাধ্যমে জানালেন, পাকিস্তান আমলে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এক মামা ছিলেন পাবনার জেলা ও দায়রা জজ। সেই আমল থেকেই ক্যাপ্টেন মনসুর পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। সিরাজগঞ্জে গণস্বাস্থ্য টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং আরও একটি প্রকল্প আছে। মোহাম্মদ নাসিম সব সময় এর পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে গেছেন।
টেলিফোনে ডা. জাফরুল্লাহর কথা তাঁর ৩৪ বছরের সহকর্মী ডা. মুহিব উল্লাহ বর্ণনা করেন। প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের প্রয়াত পিতা এবং জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ব্যক্তিভাবে জানতেন তিনি। মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল সুবিদিত। এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কথিত উপদেষ্টা বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বড় সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পরও তা কমেনি। দুজনের প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতার কিছু সাক্ষী এই প্রতিবেদকও। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকতে সংস্কার কী করতে হবে, সে বিষয়ে চিঠি লিখতেন। আমাকে পড়তে দিতেন। রাজনৈতিক চিন্তায় কিছু অমিল উভয় সম্পর্কের কখনো অন্তরায় হয়নি।
দুটি ঘটনা বলতেই হয়। ২০০০ সাল। পিপলস হেলথ অ্যাসেম্বলিতে বিশ্বের ১০০ দেশ থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আসবেন। কিন্তু সাভারে যেখানে এটা হবে, সেখানে আইএসডি ফোন সুবিধা তখনো পৌঁছায়নি। মোহাম্মদ নাসিম তখন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। রাতারাতি বিপ্লব ঘটল। মাইলের পর মাইল তার টানা হলো। অধিবেশনস্থলে বসল শ খানেক বুথ। পাঁচ দিন ধরে বিদেশি অতিথিরা টাকা খরচ করেই আইএসডি ফোন ব্যবহারের সুবিধা পেলেন।
পরের ঘটনা তিক্ত ছিল। দুই বছর আগে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ‘রাজনীতির’ শিকার হলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা–সমর্থিত সেই একই আন্তর্জাতিক হেলথ অ্যাসেম্বলির অধিবেশন। শতাধিক দেশ থেকে অতিথিরা আসবেন। কিন্তু সাভারে ওটা হতে দেওয়া হবে না। অতিথিদের বেশির ভাগ চলেও এসেছেন। কিন্তু জাফরুল্লাহ খুব অসুস্থ। ব্র্যাকের প্রয়াত স্যার ফজলে হোসেন আবেদ সম্পৃক্ত ছিলেন অন্যতম প্রধান আয়োজক হিসেবে। স্যার আবেদ গেলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বাড়িতে। সঙ্গে ব্র্যাকের বর্তমান চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান। জাফরুল্লাহ উঠতেই পারলেন না। তবে তাঁর অনুরোধ পৌঁছাল মোহাম্মদ নাসিমের কাছে। এমনকি রাত ১২টার দিকে ফজলে হোসেন আবেদ নাসিম সাহেবের বাড়িতে যান। সব সমস্যার সমাধান ঘটান প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম। শুধু স্থান বদলায়। সাভার বদলে যায় ব্র্যাকের আশুলিয়ার কনভেনশন সেন্টারে।
দুই দিন পিছিয়ে
এদিকে আরও একটু পিছিয়ে গেল গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের ফলাফল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে রিপোর্ট এখনো পেশ করেনি।’ অধ্যাপক তাবাসসুম নিজেই রোববার অপরাহ্নে তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি আর দুটি দিন সময় নিয়েছেন।
অধ্যাপক শাহিনা তাবাসসুম হলেন গণস্বাস্থ্যের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য সরকারিভাবে গঠিত পারফরম্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান।
উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়ার কথায়, ‘আজ যেহেতু রোববার, সপ্তাহের শুরু। তাই আমি নিজেই অগ্রগতি জানতে ফোন করতাম। কিন্তু চেয়ারম্যান নিজ থেকেই ফোন দিলেন। বললেন, “তাদের আরও দুই দিন সময় দরকার।”’
উল্লেখ্য, প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে বিএসএমএমইউর উপাচার্য এর আগে বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ১১ জুনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৩–৪ দিনের মধ্যে দেওয়া সম্ভব হবে। এই প্রেক্ষাপটে রোববার তাঁর কাছে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়।
তাহলে কি পারফরম্যান্স কমিটি আপনার কাছে তার প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে দিল? এর উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘পিছিয়ে দিচ্ছে না। সম্পাদনা নিয়ে আর দুই দিন সময় লাগবে। তাদের পরীক্ষা–নিরীক্ষা সব শেষ। এখন ম্যাথমেটিক্যাল (গাণিতিক) এবং স্ট্যাটিস্টিক্যাল (পরিসংখ্যানগত) ক্যালকুলেশন (হিসাব–নিকাশ) চলছে। আরও কিছু বিষয়ে মতামত দেওয়ার ব্যাপারে সময় নিচ্ছেন তাঁরা। তিনি (অধ্যাপক শাহিনা তাবাসসুম) তো আমাকে বলেছিলেন, এই সপ্তাহের শুরুতেই দিয়ে দেবেন। তাই তিনি নিজ থেকেই ফোন দিলেন।’
আপনি কি আর কোনো কমিটিতে দেবেন, উত্তরে উপাচার্য বলেন, ‘না। এটা তো সরাসরি আমাদের কাছে ঔষধ প্রশাসন পাঠিয়েছিল। রিপোর্ট পেলেই তার একটি কপি ওনাদের (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র) দেব। আরেকটি ঔষধ প্রশাসনকে দেব।
হোয়াট আ শেম
শনিবার (১৩ জুন)। সাতবার বেজে ফোনটা থেমে গেল রাত ১১টা ৩৬ সেকেন্ডে। কার ফোন, দেখে অবাকই হলাম। ফোন করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ৭৯ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক একত্রে নিজের, স্ত্রী ও সন্তানের করোনা রোগ এবং এর চিকিৎসাসহায়ক কিট মানুষের সেবায় কাজে লাগাতে লড়ছেন।
আট মিনিট পর তাঁকে ফোন দিই। দুবারও বাজেনি। ধরলেন তিনি।
অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এল: ‘কথা বলতে পারি না।’ এটুকু স্পষ্ট বুঝলাম। এর আগের একটি শব্দ অস্পষ্ট। বললাম, অল্প একটু বলুন। আপনার কণ্ঠের বিশ্রাম দরকার। এরপর নীরবতা। আবার বললাম, ‘আমরা জেনেছি, আপনি সেরে উঠছেন। কথা বলতে হবে না। আপনি শুনে যান। আপনি পুরোপুরি সেরে উঠুন। আমরা আপনার জন্য দোয়া করছি। দেশের মানুষ দোয়া করছে। আপনি যে নিজেকে সব থেকে ভাগ্যবান করোনা রোগী বলেছিলেন, সেই ভিডিও প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ দেখেছেন। হাজার হাজার মানুষ লাইক দিয়েছেন। আর মন্তব্য করেছেন একবাক্যে: আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। তাঁরা বলেছেন, আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।’
উল্লেখ্য, দুই সপ্তাহ আগে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবান করোনা রোগী মনে করেন। কারণ, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে মুখ–দেখাদেখি বন্ধ থাকার দেশে উভয় নেত্রী তাঁর খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তদারকিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজে তাঁর জন্য একটি কেবিন বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর জন্য ঝুড়িভর্তি ফল পাঠিয়েছেন। শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ওই ভিডিওটি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে ৯ লাখ ২ হাজার মানুষ দেখেছেন। প্রায় ৪ হাজার শেয়ার, ১ হাজার ৩০০ মন্তব্য এবং ৩৮ হাজার মানুষ লাইক কিংবা ভালোবাসা জানিয়েছেন। এসব তথ্য জেনে তিনি ঈষৎ জড়ানো, কিন্তু স্পষ্ট কণ্ঠেই বললেন, ‘অনেক ভালো হয়েছে।’
এরপর তাঁকে জানালাম, আপনার স্বপ্নের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের ফলাফল আসন্ন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়াকে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।
‘হোয়াট আ শেম’ (কী লজ্জা)’! ‘হোয়াট আ শেম’! দুবার বললেন। এরপরের আরেকটি কথা অস্পষ্ট। সম্ভবত বলেছেন, জাতি বঞ্চিত। এরপর আর দুটি শব্দ। দুবার বললেন, ‘ভালো থাকো।’ এরপর নীরবতা। কিন্তু লাইন কাটেননি। কিছুক্ষণ পর বিচ্ছিন্ন করে দিই।
এই টেলিফোন আলাপের একটু আগেই তাঁর স্বাস্থ্য বিষয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা হলো ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকারের সঙ্গে। তিনি গণস্বাস্থ্য সামাজিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ। বলেছিলাম, তাঁর সঙ্গে কি কথা বলতে পারি? তিনি বলেছিলেন, তাঁকে ফোন দেওয়া হয়নি। কারণ, তাঁর ভয়েস রেস্ট দরকার। অতঃপর অনেকেরই পরিচিত তাঁর ফোন নম্বরটি থেকেই ফোন আসে। বুঝলাম, ডাক্তারের চোখ ফাঁকি দিয়ে কী করে ফোন করায়ত্ত করা যায়, সেটা তার থেকে আর কে ভালো জানবে?
শনিবার রাত ১০টার একটু আগে ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকারের কাছ থেকে একটি খুদে বার্তা পাই। তাতে লেখা, ‘আল্লাহর রহমতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনা অ্যান্টিজেন নেগেটিভ এবং অ্যান্টিবডি ফর কোভিড–১৯ পজিটিভ। উনি আজ সারা দিন কোনো প্রকার বাড়তি অক্সিজেন ছাড়া স্যাচুরেশন ৯৫ শতাংশ রাখতে পেরেছেন।’ তাঁকে ফোন দিতেই তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহকে দেখতে শনিবার সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম। তখন তিনি তাঁর করোনা নেগেটিভ হওয়ার বিষয়টি আপনাকে জানাতে বললেন। আরও বললেন, তিনি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে অত্যন্ত শোকাহত।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজের প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর বিষয়ে শনিবার দিনে তাঁর স্ত্রী শিরিন হক বলেছিলেন, ‘ধীরে ধীরে ওর উন্নতি হচ্ছে। তবে কথা বেশি বলতে পারে না, খুব ক্ষীণ আওয়াজ। একটু একটু কথা এখন বলতে শুরু করেছে। সবাইকে নাকি চিরকুট দিচ্ছে, ডাক্তারদেরও চিরকুট দেয়।’
তিনি যে একটু কথা বলেন, তার প্রমাণ তো পেলামই। ফোনও যে করতে পারেন, তারও প্রমাণ মিলল। আরও প্রমাণ মিলল, জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও কত অকপট হতে পারেন ৭৯ বছর বয়সী একজন মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
লিখেছেনঃ মিজানুর রহমান খান, প্রথম আলো।