Breakingরাজনীতি

হেফাজতের আন্দোলনে হামলায় নেতৃত্বে আ.লীগ সভাপতির তিন ছেলে!

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে চলা হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেখানে বেশকিছু সরকারি স্থাপনাতেও হামলা হয়। এসব হামলার দায় বরাবরের মতো হেফাজতের উপর চাপানো হলেও সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য।

পুলিশের তদন্তকারি দল সেখানে হামলার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির তিন ছেলের সরাসরি সম্পৃক্ততা খুঁজে পান। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলেকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি করেছে সরাইল থানা পুলিশ।

উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের তিন ছেলে হেফাজতের ওই হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে পুলিশের কাছে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার খবরে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জে ব্যাপক বিক্ষোভ চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা।

এরই অংশ হিসেবে ২৭ মার্চ বিকেলে উপজেলার অরুয়াইল এলাকায় মোদিবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করেন সেখানকার হেফাজতকর্মীরা। সেদিন সেখানে তিন দিক থেকে মিছিলে এসে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে মিছিলকারীরা অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালান। এতে থানার পরিদর্শকসহ (তদন্ত) ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন।

এ ঘটনায় ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ মামলার এজাহারনামীয় ৩০ নম্বর আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব মিয়ার ছোট ছেলে ইসমাইল হোসেন। তার আরও দুই ছেলে হাফেজ জাকারিয়া মাহমুদ ও ইউনুস মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন। এ-সংক্রান্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এনিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এদিকে হেফাজতে হামলার নেতৃত্বকারী ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা মামলার আসামি ইসমাইল হোসেনকে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। অপরদিকে হামলার ঘটনার পর অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পটি বন্ধ রয়েছে। ফলে উপজেলা থেকে পুলিশ আসার আগেই খবর পেয়ে গাঢাকা দিচ্ছেন আসামিরা।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব মিয়া বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা আমাদের সুনামে ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার পরিবারের কেউ বিক্ষোভ মিছিলে যায়নি। অরুয়াইল বাজারে আমাদের একশ’র বেশি দোকানপাট রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা যেন আমাদের দোকানে হামলা না করতে পারে, সেজন্যে আমার ছেলেরা সেদিন পাহারায় ছিল। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিল।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ ক্যাম্পে হামলা মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। এখানকার আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেব মিয়ার ছেলের নাম এ মামলার এজাহারে রয়েছে। তাকেও গ্রেফতার করতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তিনিসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাই এলাকাছাড়া। বাড়িঘরে এখন শুধু নারীরা আছেন। পুরুষশূন্য রয়েছে পুরো গ্রাম।

এ ব্যাপারে সরাইল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় আহত কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজগুলো পর্যালোচনা করে হামলার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেবের তিন ছেলেকে শনাক্ত করতে পেরেছি। এর মধ্যে এক ছেলেকে ইতোমধ্যে মামলার আসামি করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

সূত্রঃ জাগোনিউজ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × five =

Back to top button